বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ শহরে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বুধবার দুপুরে শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ শেষ করে ফেরার সময় এনসিপি নেতা-কর্মীদের ঘিরে মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গাড়িতে আগুন ও ইউএনওর গাড়িতে হামলারও অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর পৌনে তিনটার দিকে সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শতাধিক ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে নেতা-কর্মীদের ঘিরে ফেলেন। তারা চারদিক থেকে ঘেরাও করে এনসিপি নেতা-কর্মী এবং পুলিশের গাড়িগুলোর গতিরোধ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
হামলার শিকার হয়ে এনসিপির গাড়িবহর বিভিন্ন দিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। পরে তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা চালায় আটকে পড়া গাড়িগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী অভিযোগ করে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছিলাম। আমাদের জানানো হয়েছিল সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু হঠাৎ করে শত শত আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও তারা নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।”
জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় গোপালগঞ্জ জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মঞ্চে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

সমাবেশ শেষে ফেরার পথে তাদের গাড়িবহর পৌর পার্ক সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে হামলা হয়। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তখন আদালত ভবনের দিকে সরে যান। এনসিপির নেতা-কর্মীরাও দৌড়ে সরে পড়েন। হামলাকারীরা তখন মঞ্চে উঠে চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাল্টা অভিযান চালালে হামলাকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু শহরের বিভিন্ন এলাকায় তখনও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
গোপালগঞ্জে রাজনৈতিক সংঘাতের এমন ঘটনার পর সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, যান চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।
গোপালগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি এখনও থমথমে। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করেছে।