Home স্বাস্থ্য রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস: চিকিৎসা ও জীবনের গল্প বলছেন ট্যামি

রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস: চিকিৎসা ও জীবনের গল্প বলছেন ট্যামি

হেলথ ডেস্ক:

হঠাৎ সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখা গেল, হাত-পা যেন শক্ত হয়ে গেছে, আঙুল ফুলে উঠেছে। রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিসের (RA) প্রাথমিক উপসর্গ অনেক সময়ই এতটাই সূক্ষ্ম হয় যে বোঝাই যায় না। কিন্তু চিকিৎসক ট্যামি এল শ্লটজহাওয়ারের ক্ষেত্রে তা হয়নি। যিনি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে অটোইমিউন এই রোগের চিকিৎসা করে এসেছেন, তিনিই একদিন নিজেই আক্রান্ত হলেন এই রোগে।

২০১৬ সালের এক সকাল, ৫৬ বছর বয়সে তিনি হঠাৎই বিছানা থেকে উঠতে পারলেন না। ভয়ানক ব্যথা ছড়িয়ে পড়েছিল কাঁধ ও কোমরে। এত বছরের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তিনি প্রথমে বুঝতেই পারেননি যে এটি RA হতে পারে। পরীক্ষাও প্রথমদিকে নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ RA এর উপসর্গ শুরুতে পরীক্ষায় ধরা পড়ে না।

শ্লটজহাওয়ার বলেন, “রোগ অনেক সময় ধীরে ধীরে শুরু হয়, আবার কখনো বজ্রপাতের মতো নামে। আমার ক্ষেত্রে তা বজ্রপাতই ছিল।”

RA আর অস্টিওআর্থ্রাইটিস (OA)-এর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো, OA সাধারণত বয়সজনিত ও হাড়ের জোড়ায় কার্টিলেজ ক্ষয়ে যাওয়ার ফলে হয়। কিন্তু RA-তে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেই জোড়ার ওপর আক্রমণ চালায়।

নিজের এত অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও শ্লটজহাওয়ারের রোগ শনাক্ত হতে সময় লাগে দশ মাস। শ্লটজহাওয়ারের দাবি, মানসিক চাপই ছিল প্রধান কারণ। তার স্ত্রী স্তন ক্যানসারে মারা যাওয়ার পাঁচ মাস পর তিনি RA-র লক্ষণ অনুভব করতে শুরু করেন।

“তার অসুস্থতা, মৃত্যু এবং সেটি সামাল দেওয়ার চাপ, সবকিছু একসাথে মিশে গিয়েছিল। সেসময় অনিদ্রা, খারাপ খাবার, ওজন কমে যাওয়া—সব মিলে শরীর ভেঙে পড়েছিল।”

তাঁর সহকর্মী, এক রিউমাটোলজিস্ট, অবিলম্বে তাঁকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন, কারণ উপসর্গ ছিল মারাত্মক। পরে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অন্যান্য DMARD (Disease Modifying Anti-Rheumatic Drugs) ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চালানো হয়।

RA নিয়ন্ত্রণে জীবনধারা ও ট্যামির পরামর্শ:

১. খাদ্যাভ্যাস: RA পুরোপুরি খাদ্যে নির্ভর নয়, তবে খাদ্য রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তাজা শাকসবজি, ফলমূল, পূর্ণ শস্য, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। চর্বিযুক্ত মাছ উপকারী, কিন্তু চর্বি, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও চিনি যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা দরকার।

২. পানীয়: চা RA প্রতিরোধে সহায়ক, কিন্তু কফির ভূমিকা পরিষ্কার নয়। মদ্যপান শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়, তাই RA আক্রান্তদের জন্য ক্ষতিকর।

৩. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ RA-এর লক্ষণ বাড়িয়ে তোলে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা জরুরি। নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং প্রয়োজনমতো বিশ্রাম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

৪. ধূমপান বর্জন: গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ধূমপানে RA হওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। এটি চিকিৎসা জটিল করে তোলে।

৫. ব্যায়াম: হালকা হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার বা যোগব্যায়াম RA নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। শরীরের অবস্থা বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যায়াম করতে হবে।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম: RA রোগীদের জন্য রাতের ৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। ঘুম কম হলে ব্যথা ও ক্লান্তি বেড়ে যায়। ঘুমানোর আগে গরম পানিতে গোসল বা তাপপ্রয়োগ সহায়ক হতে পারে।

৭. মুখগহ্বরের যত্ন: মাড়ির রোগ RA-এর সম্ভাবনা বাড়াতে পারে। নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস ও ডেন্টাল স্কেলিং RA নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৮. যৌনজীবন অবহেলা নয়: RA যৌনজীবনে প্রভাব ফেলে। ব্যথা ও ক্লান্তি ছাড়াও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

ট্যামি শ্লটজহাওয়ার বলেন, “রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আমি আরও ভালো চিকিৎসক হয়ে উঠেছি। রোগীদের কথা এখন আরও মন দিয়ে শুনি, বুঝতে পারি তাদের কষ্ট।”