Home First Lead অতিরিক্ত রিলস দেখা: মদের চেয়েও ক্ষতিকর? নষ্ট করে মস্তিষ্কের ভারসাম্য

অতিরিক্ত রিলস দেখা: মদের চেয়েও ক্ষতিকর? নষ্ট করে মস্তিষ্কের ভারসাম্য

বাড়ায় অমনোযোগ ও মানসিক চাপ


হেলথ ডেস্ক: আজকের ডিজিটাল জীবনে রিলস, শর্টস বা টিকটকের ছোট ভিডিও দেখা অনেকের দিন শুরু ও দিনের শেষে একটি স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের দ্রুত বিনোদন মনের উপর তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। কিন্তু সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, এই নিরীহ মনে হওয়া অভ্যাসটি মস্তিষ্কের উপর এমন গভীর ছাপ ফেলছে, যা অনেক ক্ষেত্রে অ্যালকোহলের ক্ষতির সঙ্গে তুলনীয়।

ডোপামিনের অতিমাত্রা এবং মস্তিষ্কের ভারসাম্যহীনতা

ডোপামিন হলো আনন্দ, প্রেরণা ও পুরস্কারের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণকারী গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার। প্রতিটি স্ক্রল বা সোয়াইপের পর নতুন ভিডিও দেখার উত্তেজনা ডোপামিনের দ্রুত নিঃস্বরণ ঘটায়। এই তাৎক্ষণিক পুরস্কারের অনুভূতি মানুষকে আরও দেখতে বাধ্য করে এবং ঠিক এই জায়গাতেই মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম ক্রমে বদলে যেতে থাকে।

নিউরোলজিস্ট ডা. কুনাল বাহরানি বলেন, অ্যালকোহল, গেমিং বা রিলস, সব ক্ষেত্রেই ডোপামিনের মাত্রা বেড়ে ইউফোরিয়া তৈরি হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিউরো-কানেকশন এমনভাবে তৈরি হয় যে মস্তিষ্ক আরও বেশি উদ্দীপনা চাইতে থাকে। ফলে সাধারণ কাজ থেকে আনন্দ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে সেরোটোনিনের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা মুড ও ইমোশন নিয়ন্ত্রণ করে। এতে বাড়ে মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা এবং আবেগের অস্থিরতা।

অমনোযোগের বাড়তি ঝুঁকি

শর্ট ভিডিওগুলোর দ্রুত পরিবর্তনশীল ভিজ্যুয়াল মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সকে ক্রমাগত চাপের মুখে ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত শর্ট ভিডিও দেখার ফলে অ্যাটেনশন স্প্যান কমে যায়। নতুনত্বের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণের কারণে মস্তিষ্ক দীর্ঘ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না।

এমআরআই স্টাডিতে দেখা যায়, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে যায়, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা এই প্রভাবের শিকার হয় সবচেয়ে বেশি।

রাতে রিলস দেখা ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করে। সার্কাডিয়ান রিদম ব্যাহত হলে হিপোক্যাম্পাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে শেখার সক্ষমতা কমে, ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বাড়ে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে। প্রফেসর কিয়াং ওয়াং পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, “শর্ট ভিডিও আসক্তি এখন বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি।”

মদের সঙ্গে তুলনা: কতটা যৌক্তিক?

কিছু গবেষণা বলছে, শর্ট ভিডিও বাইঞ্জিং মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমকে অ্যালকোহলের মতোই প্রভাবিত করে। উভয় ক্ষেত্রেই ডোপামিনের অতিরিক্ত উপস্থিতি অ্যাটেনশন ও মোটিভেশন নষ্ট করে এবং নিউরাল পাথওয়েকে পুনর্গঠিত করতে শুরু করে। ডা. প্রবীণ গুপ্তার মতে, “রিলস এবং অ্যালকোহল—দুটিই মস্তিষ্ককে ডোপামিন দিয়ে ভরিয়ে দেয় এবং মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।”

যদিও অ্যালকোহলের মতো রাসায়নিক ক্ষতি শর্ট ভিডিও সৃষ্টি করে না, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব বিশেষ করে কিশোরদের মস্তিষ্কে আরও গভীর হতে পারে। এমনকি একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, রিলসের আসক্তি অ্যালকোহলের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

সমাধান কী?

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
• দৈনিক স্ক্রিন টাইম নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখুন
• ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে কোনো শর্ট ভিডিও না দেখাই ভালো
• বাস্তব জীবনের সামাজিক যোগাযোগ বাড়ান
• নিয়মিত ব্যায়াম ও মাইন্ডফুলনেস চর্চা করুন
• অতিরিক্ত নির্ভরতার লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

অতিরিক্ত রিলস দেখা এখন আর শুধু ব্যক্তিগত অভ্যাসের সমস্যা নয়। এটি ধীরে ধীরে এক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে। সচেতনতার পাশাপাশি জীবনযাপনে সামান্য পরিবর্তনই পারে এই আসক্তি থেকে মুক্তির পথ তৈরি করতে।