
বিজেনসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের লালদিয়া চরে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে ৮০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বন্দর অপারেটর এপিএম টার্মিনালস। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বৈদেশিক বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার কোনো অর্থায়ন করবে না, সম্পূর্ণ বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ বা এফডিআই হিসেবে এই অর্থ আসবে।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এপিএম টার্মিনালস লালদিয়া এলাকাকে একটি পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ভিত্তিতে এমন পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে।
বিডা চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রকৃত বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ এখনও তুলনামূলকভাবে কম, যা বছরে ৪০০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকে। তাই একটি প্রকল্পে এককভাবে ৮০০ মিলিয়ন ডলার আসা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় অর্জন হতে পারে। তিনি বলেন, এই বিনিয়োগ শুধু একটি অবকাঠামো প্রকল্প নয়, বরং বাংলাদেশের বন্দর সক্ষমতা এবং শিল্প উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্রে রূপান্তর করা। দেশের ৫০ শতাংশ জনগণের বয়স ২৫ বছরের নিচে। এই তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হলে শিল্প খাত সম্প্রসারণ করতে হবে, আর তার জন্য প্রয়োজন আধুনিক ও দক্ষ বন্দর পরিকাঠামো।

বর্তমানে দেশের বন্দর সক্ষমতা সীমিত। এমনকি ছয়গুণ বৃদ্ধির পরও তা ভিয়েতনামের মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম নয়। ভিয়েতনামে ৫০টির বেশি বন্দর রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশে প্রধানত চট্টগ্রাম, মোংলা ও মাতারবাড়ী মিলিয়ে গুটিকয়েক বন্দর চালু রয়েছে। তাই উন্নত ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক দক্ষ প্রতিষ্ঠান যুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তিনি।
এপিএম টার্মিনালসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রতিষ্ঠান বহু বন্দর পরিচালনা করছে। এমনকি ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশেও আন্তর্জাতিক বন্দর অপারেটররা একাধিক বন্দর পরিচালনায় যুক্ত রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে এখনো নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে অযথা সংশয় রয়েছে, যা এই ধরনের বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
বন্দর এলাকার নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাচ্ছে। তাদের ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখা যায়, এবং তারা বাণিজ্যিক ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম।
নতুন বন্দরটিকে একটি গ্রিন পোর্ট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, কম কার্বন নির্গমন, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং আধুনিক ডিজিটাল অপারেশন সিস্টেম সংযুক্ত থাকবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ এশিয়ার সামুদ্রিক ট্রানজিট ব্যবস্থায় বাংলাদেশের ভূমিকা আরও জোরালো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পরিদর্শনে বিডা চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেসসচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরিবেশগত ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ নিরাপত্তা রক্ষার বিষয়গুলো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে বলেই এ প্রকল্প বাস্তবায়নের আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
এই বিনিয়োগ শুধু একটি অবকাঠামো নির্মাণ নয়, বরং দেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে একটি নতুন ধারা সূচিত করার সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।
কর্ণফুলী নদীতীরবর্তী হাজার কোটি টাকা মূল্যের এই জায়গা ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধ দখলে ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ চালিয়ে দখলমুক্ত করে।