Home পরিবেশ চিলমারীতে শতবর্ষী গাছে আগুন: জনতার ভিড়, প্রশাসনের সতর্কতা

চিলমারীতে শতবর্ষী গাছে আগুন: জনতার ভিড়, প্রশাসনের সতর্কতা

ছবি সংগৃহীত

উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের চিলমারীর রমনা রেলস্টেশন চত্বরে শতবর্ষী শিল কড়ই গাছে আগুন ধরে যাওয়ার ঘটনায় দিনভর চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ গাছটির গোড়ায় ধোঁয়া ও শিখা দেখতে পান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও দুপুর পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, গাছের ভেতরে শুকনো কাঠ ও পাতার স্তূপ জমে ছিল, যা দীর্ঘদিনের পচন ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে দাহ্য হয়ে ওঠে। গাছটির ভেতরে ফাঁপা গহ্বর থাকায় সেখানে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বাইরে থেকে পানি দিয়েও আগুনের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

চিলমারী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা বলেন, “গাছের ভিতরের অংশে আগুন লেগে গিয়েছে। পানি সরাসরি সেখানে পৌঁছাতে পারছে না, তাই আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে।”

ঘটনাস্থলে ছুটে আসা চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুজ কুমার বসাক বলেন, “গাছটি এখন বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এলাকাবাসীর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”

স্থানীয় বাসিন্দা মোজাহার হোসেন বলেন, “ভোরে দেখি গাছের গোড়া থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। একসময় দেখি আগুনের শিখাও দেখা যাচ্ছে। কেউ বুঝতে পারছিল না, কীভাবে গাছের ভিতরে আগুন জ্বলছে।”

অনেকে এই ঘটনাকে অলৌকিক ভাবলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ডের রয়েছে সুস্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী বলছে?

পরিবেশবিদ ও বোটানি বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো গাছে ভেতরে ফাঁপা সৃষ্টি হলে সেখানে শুষ্ক কাঠ ও ঝরা পাতার স্তূপ জমে যায়। শুষ্ক মৌসুমে এসব জ্বালানি উপাদান সহজেই আগুন ধরাতে সক্ষম হয়। কখনো গাছের গহ্বরে সিগারেট ফেলা বা আগুন জ্বালানোর ফলে ধীরে ধীরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

এ ছাড়াও, একে বলা হয় “spontaneous combustion” বা নিজে থেকে আগুন জ্বলে ওঠা, যেখানে শুষ্ক কাঠ, বাতাস এবং তাপমাত্রার প্রভাবে দাহ্য উপাদান নিজে নিজেই জ্বলতে পারে।

এ ধরনের গহ্বরগুলো “চিমনি ইফেক্ট”-এর মতো কাজ করে। নিচ দিয়ে বাতাস প্রবেশ করে এবং উপর দিয়ে ধোঁয়া বের হয়, ফলে আগুন দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় থাকে।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ বা হালকা বজ্রপাতের আঘাতও গাছের ফাঁপা অংশে আগুন লাগাতে পারে, যদিও চিলমারীর ঘটনায় এমন প্রমাণ এখনও মেলেনি।

আগুন নেভাতে ব্যর্থতা কেন?

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলেন, গাছের ভিতরে আগুন ধরলে তা খুবই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, কারণ আগুন ভেতরে ছড়িয়ে পড়লে বাইরের পানি তেমন কার্যকর হয় না। অনেক সময় গাছটি সম্পূর্ণ কেটে ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাছটির চারপাশে জনসমাগম নিষেধ করা হয়েছে। রেলস্টেশন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যাতে কেউ গাছের কাছে না যায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতেও শতবর্ষী গাছে আগুন ধরে যাওয়ার নজির রয়েছে। বাংলাদেশে এটি বিরল ঘটনা হলেও একেবারে নতুন নয়।

চিলমারীর এই ঘটনা ‘অলৌকিক’ নয়, বরং এটি একটি ব্যাখ্যাসম্পন্ন প্রাকৃতিক ও জ্বলন প্রক্রিয়ার ফল। প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশবিদদের মতে, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সচেতনতা জরুরি। ভবিষ্যতে পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ চিহ্নিত করে আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।