আমিরুল মোমেনিন:
বাংলার আকাশে শরতের আগমনী বার্তা যেন ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে। বর্ষার টানা বৃষ্টির পর প্রকৃতি এখন শান্ত, নির্মল। সকাল বেলার আকাশে ভেসে থাকা সাদা তুলোর মতো মেঘ, চারদিকে ছড়িয়ে পড়া কোমল আলো আর নদীর ধারে কাশফুলের শুভ্র সমারোহ—সবকিছু মিলে মনে হয় প্রকৃতি যেন নতুন করে সাজছে।
ভোরবেলা যখন শিশিরে ভেজা ঘাসের ওপর সূর্যের প্রথম কিরণ পড়ে, তখন গ্রামের মাঠ যেন সোনালি আভায় ঝলমল করে ওঠে। কাশফুলের শুভ্র রঙ বাতাসে দোলে, দূর থেকে মনে হয় যেন কেউ প্রকৃতির বুকে শুভ্রতার আস্তর বিছিয়ে দিয়েছে। এই দৃশ্য শুধু নয়নের আরাম নয়, মনে আনে অদ্ভুত প্রশান্তি।
গ্রামীণ জনপদে শরতের সৌন্দর্য আরও স্পষ্ট। ফসলের মাঠে ধানের শিষে আসতে শুরু করেছে সোনালি আভা। কৃষকের ব্যস্ততা বাড়ছে, নতুন মৌসুমের প্রস্তুতিতে তারা মেতে উঠছেন। মাঠে পাখির কূজন আর শস্যের সুবাস মিলে তৈরি করছে ভিন্ন রকম আবহ। শহরের মানুষও এ সময় ছুটে যান গ্রামে বা নদীর ধারে, কাশবনে। অনেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছেন, ছবিতে বন্দি করছেন শরতের সৌন্দর্য।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্ষার বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশে বৃষ্টিপাত অনেকটাই কমে এসেছে। ফলে দিনগুলো হচ্ছে রোদেলা, আর সকাল-বিকেল মিলছে শীতল আবহাওয়া। বছরের এই সময়টিতে প্রকৃতি যেন মানুষের জন্য উপহার হয়ে আসে—না আছে অতিরিক্ত গরম, না আবার কনকনে ঠান্ডা।
শরৎ শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গেও এর নিবিড় যোগ আছে। সাহিত্যকর্মে শরতের উল্লেখ অসংখ্যবার পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শরতের আকাশ আর কাশফুল পেয়েছে বিশেষ স্থান, নজরুলের কবিতায়ও শরতের শান্তি ও সৌন্দর্য বারবার ধরা দিয়েছে।
তাছাড়া শরতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুর্গাপূজার মহোৎসব। এ সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আনন্দ-উল্লাসে মাতেন। মণ্ডপে মণ্ডপে বাজতে থাকে ঢাকের বাদ্য, উৎসবমুখর পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত। শরতের নির্মল আবহাওয়া এই আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
সব মিলিয়ে শরৎকাল যেন এক অনন্য ঋতু, যেখানে প্রকৃতি শুভ্রতায় ভরে ওঠে আর মানুষ খুঁজে পায় এক নতুন প্রাণশক্তি। নীল আকাশ, ভাসমান সাদা মেঘ, কাশফুলের শুভ্রতা আর কৃষকের মাঠে ধানের সোনালি রঙ—সব মিলে শরৎ হয়ে ওঠে বাংলার প্রকৃতির শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক।