বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের টিডং উপজাতি বিশ্বাস করে, বিবাহ মানে শুধু দুটি হৃদয়ের মিলন নয়, বরং আত্মা ও শুচিতার এক পবিত্র বন্ধন। এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নিয়েছে এক অদ্ভুত কিন্তু কঠোর রীতি বিয়ের পর বর-কনেকে তিনদিন ধরে ঘরে আটকে রাখা হয়, যেখানে তারা মলত্যাগ তো দূরের কথা, স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়াও করতে পারেন না।
রীতির মূল কাঠামো
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পরপরই নবদম্পতিকে একটি ছোট ঘরে রাখা হয়। এই ঘরে তিন দিন-রাত তারা থাকবে একসঙ্গে, কিন্তু সীমিত পরিমাণে খাবার ও পানি দেওয়া হয়, যাতে তাদের প্রস্রাব কিংবা মলত্যাগের প্রয়োজন না হয়।
তিন দিন কেউ যদি মলত্যাগ করে ফেলেন, তবে তা অশুভ লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়। সমাজের বিশ্বাস অনুযায়ী, এতে নবদম্পতির দাম্পত্য জীবনে মৃত্যু, বিবাহ বিচ্ছেদ বা সন্তানহীনতার আশঙ্কা বাড়ে।
কে পালন করে এই নিয়ম?
এই রীতিটি টিডং উপজাতির প্রায় প্রতিটি পরিবারেই পালিত হয়, বিশেষ করে গ্রামীণ ও রক্ষণশীল এলাকায়। বর-কনেকে ঘরে তালা না লাগালেও চারপাশে পরিবারের প্রবীণরা পাহারা দেয়, যেন তারা রীতির বাইরে না যায়।
শরীর ও মানসিকতার পরীক্ষা
তিন দিন মলত্যাগ না করে থাকা নিঃসন্দেহে কঠিন এক কাজ। তাই এই রীতি একদিক থেকে শরীর ও মানসিকতার এক চরম পরীক্ষা। অনেকে বলে থাকেন, এই সময় বর-কনের মধ্যে একধরনের ঘনিষ্ঠতা জন্মায়, যা তাদের পরবর্তীতে সহনশীল, সংযমী ও বোঝাপড়ার সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
সাংস্কৃতিক যুক্তি ও সমালোচনা
টিডং উপজাতি বিশ্বাস করে, এই তিন দিনই দম্পতির জীবনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। যদি তারা এই সময় সফলভাবে পার করে, তবে আগামী জীবন হবে মসৃণ ও দীর্ঘস্থায়ী।
তবে আধুনিক স্বাস্থ্যবিদরা এই রীতিকে স্বাস্থ্যঝুঁকির দিক থেকে বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন। দীর্ঘ সময় মলত্যাগ বা প্রস্রাব না করা কিডনি, অন্ত্র ও পেটের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ঐতিহ্য না অত্যাচার?
এই প্রশ্নে বিভক্ত অনেকেই। কেউ বলেন, এটি শুদ্ধতার প্রতীক; আবার কেউ বলেন, এটি মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের রূপ।
তবু টিডং উপজাতির সমাজে এই রীতি আজও প্রভাবশালী। সময়ের সঙ্গে কিছু পরিবার এতে শিথিলতা আনলেও, অনেকের কাছে এটি এখনও বিবাহের অবিচ্ছেদ্য অংশ।