বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আগামীকাল সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবে । বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্যানেল এদিন রায় দিতে বসবেন।
রায় সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, রয়টার্স এবং ট্রাইব্যুনালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ। পাশাপাশি রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় স্ক্রিনে লাইভ দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, হাসিনা-কামালের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে, তাই তারা দুইজনের সর্বোচ্চ দণ্ড—মৃত্যুদণ্ড—প্রত্যাশা করছে। প্রসিকিউটর গাজী এম. এইচ. স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এখনো কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না হলেও শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে ‘অনুকম্পার’ সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, দণ্ডিত হলে ট্রাইব্যুনালের সাজা পরোয়ানা ইন্টারপোলের মাধ্যমে কার্যকর প্রক্রিয়ায় পাঠানো হবে।
গত ১৩ নভেম্বর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা আদালতের কাছে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন। আদালত বিবেচনার অবকাশ রাখলেও “এ অপরাধের দায়ে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়াই ন্যায়সংগত” বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধে প্রথম বিবিধ মামলা দায়ের হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল প্রথম শুনানিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
পরবর্তী সময়ে, ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে একই মামলায় আসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনের আকার ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা, যার মধ্যে রয়েছে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা।
এই ভিত্তিতে ১ জুন তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যা ট্রাইব্যুনাল সেদিনই আমলে নেয়। ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচার চলাকালে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হন সাবেক আইজিপি মামুন এবং পরবর্তীতে আদালতে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য দেন।
গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মামলার সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। এরপর প্রতিরক্ষার বক্তব্যের জবাব দেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। অপরদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চান। মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী খালাস প্রার্থনা করেন।
এই মামলায় মোট ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতা, স্বজনহারা বহু পরিবার, জুলাই আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
প্রসিকিউশন যে পাঁচটি অভিযোগ এনেছে, সেগুলো হলো
এক. ১৪ জুলাই শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের বাচ্চা’ মন্তব্যের পর প্ররোচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সশস্ত্ররা হামলা চালায়। এতে দেড় হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় ২৫ হাজার আহত হয়।
দুই. হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা, যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে বিভিন্ন বাহিনীতে পৌঁছে বাস্তবায়িত হয়।
তিন. রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিন আসামিকে দায়ী করা হয়েছে।
চার. চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ।
পাঁচ. আশুলিয়ায় ছয় নিরস্ত্র মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা—যার দায়ও তাদের ওপর বর্তায়।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার, প্রশাসনের একটি অংশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একের পর এক মামলা আসে। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব মামলার বিচার চলছে।










