বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রবিবার (১ জুন) আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করবে প্রসিকিউশন। বিচার কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে শেখ হাসিনার মামলার শুনানি বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
এর আগে, আন্তর্জাতিক গুম সপ্তাহ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম জানান, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হবে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে। এমনভাবে প্রক্রিয়া এগোবে, যাতে বিচার নিয়ে কেউ নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে।”
প্রসিকিউশনের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্দোলন দমন করতে গিয়ে শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে নির্বিচারে অন্তত ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুতর অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে রয়েছে হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা ও উসকানির অভিযোগ। একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধেও।
গত ১২ মে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মামলাটির শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করে। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি পরিচালনা করছেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে এই বিচার প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আন্দোলনের সময় নিহতদের পরিবার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিচার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি দেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে একটি নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।