Home First Lead মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার: ‘মহা-লুটপাট’

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার: ‘মহা-লুটপাট’

৬০ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছরে গড়ে ওঠা দুর্নীতির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাঁড়াশি পদক্ষেপে মামলা সংখ্যা শতকে পৌঁছেছে। নতুন করে ৬০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও কর্মকর্তাসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেওয়ায় মোট মামলা দাঁড়িয়েছে ১০০টি এবং আসামি সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩২।

দুদক জানায়, সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার অভিবাসন ব্যয় উপেক্ষা করে সিন্ডিকেট গ্রাম-গঞ্জের শ্রমিকদের কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে। কোনো বৈধ রশিদ বা নথি না থাকায় এই অর্থের বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে।

মোট পরিসংখ্যান:

৮ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির পাহাড় এর আগে গত মাসে একই অভিযোগে ৪০টি এজেন্সির ১০৮ জনের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ৯৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের দায়ে ৪০টি মামলা করেছিল দুদক। বর্তমান ৬০টি এবং পূর্বের ৪০টি মামলা যোগ করলে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে দুর্নীতির যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা আঁতকে ওঠার মতো: মোট মামলা: ১০০টি। মোট আসামি: ২৩২ জন (এজেন্সি মালিক ও কর্মকর্তা)। মোট আত্মসাৎকৃত অর্থ: ৭ হাজার ৯৮৪ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

নতুন ৬০ মামলায় ভুক্তভোগী শ্রমিকের সংখ্যা ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৭৬ জন। এই অংশে আত্মসাৎ হয়েছে ৪ হাজার ৫৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি। এর আগে দাখিল করা ৪০ মামলায় আত্মসাৎ হয়েছিল ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মালয়েশিয়া অভিবাসনকে কেন্দ্র করে সিন্ডিকেটের লুটপাটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

দুদকের মহাপরিচালক মো: আক্তার হোসেন বলেন, কিছু প্রভাবশালী এজেন্সি রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। বায়রার (BAIRA) পদ ব্যবহার করে তারা অন্যান্য এজেন্সিকে নিজেদের ‘লাইন’ দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাড়তি অর্থ আদায় করেছে।

বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এই সিন্ডিকেটের কারণে লাখো পরিবার ঋণের ফাঁদে পড়েছে। অনেক শ্রমিক ঘরবাড়ি বন্ধক রেখে মালয়েশিয়া গেলেও সেখানে কাজ নিশ্চিত হয়নি। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দুর্বল হয়।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুদকের পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সিন্ডিকেটমুক্ত, স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত প্রক্রিয়া ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হবে না।