Home কলকাতা মালদার পল্লীতে হিন্দু যুবকের শেষযাত্রায় মুসলিম প্রতিবেশীরা

মালদার পল্লীতে হিন্দু যুবকের শেষযাত্রায় মুসলিম প্রতিবেশীরা

সংগৃহীত ছবি।

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কলকাতা: দাঙ্গা, বিভেদ আর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার নামে যখন সমাজে ধর্মের নামে দেয়াল তোলা হচ্ছে, তখন এক অসাধারণ উদাহরণ তৈরি করল মালদার মানিকচকের করিয়া সুলতানপুর গ্রাম। এখানে এক হিন্দু যুবকের মৃত্যুর পর তার শেষযাত্রায় পাশে দাঁড়ালেন মুসলিম প্রতিবেশীরা। নিজেরাই মরদেহ বহনের মাচা বাঁধলেন, কাঁধে তুলে নিয়ে গেলেন শ্মশান পর্যন্ত—মানবতার এই ছবি যেন ধর্মের গণ্ডিকে ছাপিয়ে ওঠা এক নিঃশব্দ বিপ্লব।

প্রয়াত যুবক দীনেশ সাহা ছিলেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও দৃষ্টিশক্তিতে দুর্বল। বৃহস্পতিবার পারিবারিক উত্তেজনায় আত্মহত্যা করেন। পরদিন শুক্রবার, জুমার নামাজের ঠিক আগে, তার মরদেহ যখন গ্রামে ফেরে, তখন সৎকারের জন্য হিন্দু প্রতিবেশীদের সংখ্যা কম হওয়ায় বিপাকে পড়ে পরিবার। তখনই এগিয়ে আসেন স্থানীয় মুসলিমরা।

তাঁরা দল বেঁধে বাঁশ জোগাড় করে তৈরি করেন মাচা, দেহটি তুলে নেন কাঁধে করে এবং হরি বল ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গেই শ্মশানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। এই শেষযাত্রায় হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে পা মেলান—সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ আলিম বলেন, “মানুষের পরিচয় তার ধর্মে নয়, তার মানবতায়। প্রতিবেশী হিসেবে দীনেশ ভাইয়ের শেষযাত্রায় পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব।”
আরেকজন বাসিন্দা রুকুন মিয়া বলেন, “কে কোন জাতের, তাতে কিছু যায় আসে না। মানুষ হিসেবে একে অপরের পাশে থাকাটাই আসল ধর্ম।”

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এই ঘটনার ব্যাখ্যা রয়েছে। ইসলাম অমুসলিমদের সঙ্গেও সদ্ব্যবহার ও ন্যায়বিচার বজায় রাখার নির্দেশ দেয়।

সমাজবিজ্ঞানী ড. শিবশঙ্কর পাল বলেন, “এই ঘটনাগুলি প্রমাণ করে দেয়, ধর্মের অন্তঃসার শুধু রীতি নয়—এ এক মানবিক দর্শন, যার মূল শিখর ‘সহানুভূতি’। মুসলিম প্রতিবেশীদের এই ভূমিকাই দেখিয়ে দেয় ইসলাম কেবলমাত্র নিজের সম্প্রদায় নয়, গোটা মানবজাতির কল্যাণ চায়।”