Home সারাদেশ  অরক্ষিত বোরিং পাইপের বলি হতে চলেছে সাজিদ?

 অরক্ষিত বোরিং পাইপের বলি হতে চলেছে সাজিদ?

সাজিদ

উদাসীন মালিকের বিরুদ্ধে ফুঁসছে জনতা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: তানোর উপজেলার পাচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট গ্রামে  বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অধীনে পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করা একটি গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত এবং অরক্ষিত পাইপে পড়ে গেছে ৮ বছর বয়সী শিশু সাজিদ। গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করলেও, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সাজিদের কোনো খোঁজ মেলেনি। এই ঘটনায় এলাকার বোরিং মালিক তাহের এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশে খেলছিল সাজিদ। সেখানে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) অধীনে পরীক্ষামূলকভাবে একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের পর সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় অরক্ষিত ফেলে রাখা হয়েছিল। খেলার একপর্যায়ে শিশুটি ওই অরক্ষিত বোরিং পাইপের ভেতরে পড়ে যায়।

উদ্ধার অভিযান ও প্রতিবন্ধকতা:
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা সাজিদকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এবং ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। তারা জানিয়েছেন, সাজিদ ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের যে গর্তে পড়ে গেছে, তার পাশে বড় গর্ত খুঁড়ে সেখান থেকে সুড়ঙ্গ পথে তার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সেখানেও সাজিদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

শিশুটির অবস্থান শনাক্তে সেই গর্তে ফায়ার সার্ভিস বিশেষ ক্যামেরা ফেলেছিল, কিন্তু ৩৫ ফুট যাওয়ার পর ক্যামেরাটি আটকে যায়। সাজিদের কোনো দেখা মেলেনি। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ধারণা, সাজিদ হয়তো ৪০ ফুট নিচেই রয়েছে। অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানায় ফায়ার সার্ভিস।

বেঁচে থাকার শঙ্কা:
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পর পাইপের ভেতর থেকে শিশুটির সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। তবে দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় শিশুটি এখনও বেঁচে আছে কি না, তা নিয়ে গভীর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।

মালিকের চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা:
এলাকাবাসীর অভিযোগের তীর বোরিং মালিক তাহের এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দিকে। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত এই ডিপের পাইপটি মুখ খোলা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এই অরক্ষিত বোরিং পাইপটি একটি টাইম বোমা হয়ে ঝুলছিল, যার বিস্ফোরণ ঘটেছে শিশু সাজিদের দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে।

জনতার ক্ষোভ ও শোক:
এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একই সাথে বোরিং মালিক ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় জনতা। ঘটনাস্থলে শত শত উৎসুক মানুষ ভিড় করেছেন এবং শিশুটিকে দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছেন। স্থানীয়রা বলছেন, মালিকের সামান্য দায়িত্বশীলতা এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হয়তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

শিশু সাজিদের এই ঘটনা বোরিং মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার এক করুণ দৃষ্টান্ত। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সকল অরক্ষিত বোরিং পাইপ ও গভীর নলকূপের মুখ অবিলম্বে বন্ধ করা এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।