বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: তানোরে গভীর নলকূপের পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে প্রাণ হারানো দুই বছরের শিশু সাজিদকে অশ্রুসিক্ত নয়নে চিরবিদায় জানিয়েছে হাজারো মানুষ। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার কোয়েলহাট গ্রামে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় অংশ নিতে এবং শিশুটিকে একনজর দেখতে সকাল থেকেই ওই গ্রামে ঢল নামে হাজারো মানুষের।
শোকস্তব্ধ পরিবার ও বিচার দাবি
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন সাজিদের বাবা-মা। জানাজার আগে শোকার্ত বাবা রাকিবুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘আর কোনো বাবা-মায়ের বুক যেন এভাবে খালি না হয়। আমি বিচার চাই—যেন দেশের আর কোনো পরিবারকে এভাবে সন্তান হারাতে না হয়। এ ঘটনায় যাদের অবহেলা ছিল, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’’
সাজিদের মা রুনা খাতুন সন্তানের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেওয়া রুনা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘‘আমার সাজিদ খুব চঞ্চল ছিল। সবকিছুতে ওর আগ্রহ ছিল।’’ তাকে সান্ত্বনা দিতে আসা আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের চোখেও ছিল পানি।
৩২ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান ও করুণ পরিণতি
গত বুধবার দুপুরে মায়ের সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়ে গভীর নলকূপের একটি পরিত্যক্ত গর্তে পড়ে যায় শিশু সাজিদ। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করে। গর্তের পাশেই প্যারালাল আরেকটি গর্ত খুঁড়ে দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টার নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার পর বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৭ মিনিটে মাটির প্রায় ৪৫ ফুট নিচ থেকে সাজিদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। দ্রুত তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে তানোর ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ আব্দুর রউফ বলেন, ‘‘শিশুটিকে ৪৫ ফুট গভীরে পাওয়া যায়। সম্ভবত অক্সিজেনের অভাবেই তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা উদ্ধারের চেষ্টা করতে গিয়ে গর্তের ওপরের মাটি ধসিয়ে ফেলে, যার ফলে গর্ত অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। এতে আমাদের সরবরাহ করা অক্সিজেন শিশুটির কাছে পৌঁছাতে পারেনি।’’
মামলা ও আইনি জটিলতা
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো নিয়মিত মামলা হয়নি। তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুজ্জামান জানান, থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে। পুলিশ কছির উদ্দীন নামের এক ব্যক্তিকে খুঁজছে, যিনি ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
মামলা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘‘কেউ এখনো অভিযোগ করেনি। পুলিশ নিজ উদ্যোগে মামলা করবে না। এটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করতে পারে।’’ অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান বলেন, ‘‘পুলিশ বা ভুক্তভোগীর পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। এখানে ইউএনওর কিছু করার নেই।’’
গাজিপুরে কর্মরত সাজিদের বাবা রাকিবুল এবং গ্রামের বাড়িতে থাকা মা রুনার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ঘিরে। কিন্তু একটি অরক্ষিত গর্ত সেই স্বপ্ন নিমিষেই শেষ করে দিল। দেশজুড়ে সাজিদের জন্য যে দোয়া ও উদ্বেগ ছিল, তা শেষ হলো এক বুকভরা হাহাকারে।










