বিশেষ প্রতিবেদন
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও ধলাই নদী একসময় শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক চিত্র ভয়ঙ্কর। পথের পাশে, নদীর চরে, ক্রাশার মিলের আঙিনায় স্তূপ করে রাখা সাদা পাথর যেন এক নীরব সাক্ষ্য বহন করছে বছরের পর বছর ধরে চলা লুটপাটের।
ভোলাগঞ্জের পথে পথে এখনো দেখা যায় ধলাই নদী থেকে লুট হওয়া পাথরের স্তূপ। অনেক পাথর ইতোমধ্যে বেচাকেনা হয়ে গেছে, বাকিগুলো রাতের আঁধারে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিছু পাথর ক্রাশার কারখানায় মজুত রাখা হলেও মালিকরা অস্বীকার করছেন এগুলো লুটের পাথর বলে। এই বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে—প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখন দৃশ্যমান তৎপর, তখনও কেন পাথর সরানোর সুযোগ মিলছে?
জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুদকও অনুসন্ধানে নেমেছে, নেপথ্যের হোতাদের খুঁজে বের করতে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে বাংলাদেশে অনেক তদন্তই সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যায়, দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায় না। সাদা পাথরের ক্ষেত্রেও যদি সেই চিত্র পুনরাবৃত্তি হয়, তবে বর্তমান অভিযান কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সঠিকভাবেই বলেছে, এই লুট কেবল পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে না; পর্যটনকেন্দ্র, স্থানীয় অর্থনীতি ও মানুষের জীবিকা ধ্বংস করছে। পর্যটনশিল্পে বড় ধরনের ক্ষতি হলে তা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
২০১৭ সালে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র গত এক বছরে প্রায় নির্বিচারে ধ্বংস হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলার শিথিলতা, প্রভাবশালী মহলের ছায়া, আর প্রশাসনিক উদাসীনতার ফাঁক গলেই এই চুরিচামারি চলেছে।
এখন সময় এসেছে কঠোর বাস্তব পদক্ষেপের—
- পাথর লুটে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
- মজুত পাথরের তালিকা প্রণয়ন ও সরকারি হেফাজতে নেওয়া
- ক্রাশার মিল ও পরিবহন রুটে স্থায়ী নজরদারি
- স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী পাহারা ব্যবস্থা
- প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় আলাদা বিশেষ টাস্কফোর্স
প্রশাসনের অভিযান প্রশংসনীয়, কিন্তু এটি যেন “ফ্ল্যাশ অ্যাকশন” হয়ে থেমে না যায়। দীর্ঘমেয়াদে সাদা পাথর ও ভোলাগঞ্জকে টিকিয়ে রাখতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জনসচেতনতার সমন্বয় জরুরি। অন্যথায়, এই ধ্বংস শুধু ইতিহাসে আরেকটি ব্যর্থতা হিসেবেই লিপিবদ্ধ হবে।