বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
সম্প্রতি সৌদি আরবের মরু অঞ্চলে সান্ডা শিকার ও ভক্ষণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। টিকটিকির মতো দেখতে এই প্রাণীটি আসলে “ড্যাব” নামে পরিচিত একটি মরুভূমির সরীসৃপ। স্থানীয়ভাবে এটি বহু বছর ধরে একটি সুস্বাদু খাবার হিসেবে বিবেচিত হলেও, বাংলাদেশের অনেক ব্যবহারকারী তা দেখে হতবাক হয়েছেন এবং নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
তবে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সান্ডা বা ড্যাব শিকার ও খাওয়ার রীতি নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে দেশটির কাসিম প্রদেশের বুরাইদা অঞ্চলসহ বিভিন্ন মরুভূমিতে প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট শিকার মৌসুম শুরু হয়। এ সময় তরুণ সৌদিরা দলবেঁধে মরুভূমিতে গিয়ে সান্ডা খোঁজেন এবং শিকার করে থাকেন।
সৌদি শিকারি মাজেদ আল-মাত্রুদি জানান, “সান্ডা শিকারের একাধিক পদ্ধতি আছে। কেউ গর্তে পানি ঢেলে তুলে আনে, কেউ আবার গর্ত থেকে দূরে থাকলে ধাওয়া দিয়ে ধরে। অনেক সময় অস্ত্র দিয়েও শিকার করা হয়।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের শখ হলেও এখন আমরা সবাইকে পরিমিত শিকার করার পরামর্শ দিই, যাতে এই প্রাণী বিলুপ্ত না হয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, সান্ডা বা স্পাইনি-টেইলড লিজার্ড মরুভূমিতে গর্তে বাস করে এবং গ্রীষ্মের তীব্র গরম থেকে বাঁচতে মাটির নিচে আশ্রয় নেয়। বসন্তকালে মরুভূমির উদ্ভিদ খাওয়ার ফলে এ সময় তাদের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে ওঠে বলে মনে করেন শিকারি হাম্মাদ আল-ফাওয়াজ। তার ভাষায়, “যারা একবার খায়, তারা আবার খেতে চায়। শুধু তাই নয়, পরের মৌসুমে আবার শিকারে যাওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করে।”
তবে এই শিকার ও ভক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন চিকিৎসক সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাদের মতে, সান্ডার মাংসে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন ও কোলেস্টেরল থাকায় অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এদিকে, পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে সৌদি সরকারের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ওয়াইল্ডলাইফ ড্যাব শিকার নিষিদ্ধ করেছে এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। নির্ধারিত শিকার মৌসুমে এই প্রাণী শিকার বৈধ । অতীতে অবৈধভাবে সান্ডা শিকার করায় একাধিক ব্যক্তিকে জরিমানা ও কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হয়েছে।
বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে বিদ্রূপ, কটাক্ষ ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনার পাশাপাশি অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্যাভ্যাস ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা সম্পর্কে না জেনে মন্তব্য করছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। একজন গবেষকের মতে, “একটি দেশের খাদ্যাভ্যাস অন্য দেশের মানুষের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতেই পারে, কিন্তু এটিকে অপমান বা ঘৃণার বস্তুতে পরিণত করা অনুচিত।”
সাম্প্রতিক এই বিতর্ক প্রমাণ করেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির চিত্র ভাইরাল হলেও, তার গভীর ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বোঝা জরুরি। মধ্যপ্রাচ্যে বহু শতাব্দী ধরে মরুভূমির জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবেই সান্ডা একটি স্বীকৃত খাবার হিসেবে পরিগণিত।