বিনোদন ডেস্ক: জনপ্রিয় পাকিস্তানি অভিনেত্রী সাবা কামার আবারও আলোচনায়—তবে এবার কোনো নাটক বা সিনেমা নয়, বরং একটি মন্তব্যকে ঘিরে। সম্প্রতি তিনি ‘দ্য গ্রিন রুম’ নামের এক পডকাস্টে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে করাচিতে স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রসঙ্গে বলেন, “আস্তাগফিরুল্লাহ, কখনও না!”
তার এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই নেটদুনিয়ায় শুরু হয় তুমুল প্রতিক্রিয়া।
করাচি নয়, পছন্দ ইসলামাবাদ ও লাহোর
সাবা কামার পডকাস্টে বলেন, তিনি ইসলামাবাদ ও লাহোরে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। করাচিতে তিনি শুধুমাত্র কাজের প্রয়োজনে যান এবং কাজ শেষে দ্রুত ফিরে আসেন। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, “যদি কেউ আমার জন্য করাচিতে একটা বাড়ি কিনে দেয়, তাহলে হয়তো ভাবব। যদিও আমি ইতিমধ্যেই নিজের জন্য একটা বাড়ি বানিয়ে ফেলেছি।”
আরও মজার ছলে তিনি বলেন, “সব নাটকের শুটিং করাচি থেকে ইসলামাবাদে সরিয়ে আনুন, তাহলেই সমস্যা মিটে যায়।”
নেটিজেনদের ক্ষোভ
তার এই মন্তব্যের পরপরই করাচির দর্শক ও নাটকপ্রেমীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেউ লিখেছেন, “যে শহর থেকে আয় করছো, তাকে এভাবে অপমান?” আবার কেউ বলেছেন, “যে শহর তোমাকে পরিচিতি দিয়েছে, তুমি সেটাকেই ছোট করলে!”
সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া
অভিনেত্রী ইফাত ওমর সাবা কামারের পক্ষে মন্তব্য করেন, “ভাই, জোর করে ভালোবাসা দেখাতে হবে নাকি? আমরা কাজ করতে যাই। শহরটা সত্যিই নোংরা।”
তবে প্রবীণ অভিনেত্রী জাভেরিয়া সৌদ তার প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, “শহর নোংরা নয়, মানুষের মন নোংরা। যারা নিজেদের দেশকে নোংরা বলে, তাদের চিন্তা নোংরা।”
অভিনেতা ইয়াসির হুসাইন আবার রসিকতার ভঙ্গিতে করাচির একটি গাছের ছবি পোস্ট করে লেখেন, “দেখো, সুন্দর করাচির গাছগুলো! সাবা কামার, তুমি শুধু হিংসা করছো।”
সাবা কামার সেটি রিপোস্ট করে লিখেন, “তোমরা সত্যিই দারুণ! শান্তি রাখো সবাই—করাচি সুন্দর, শুধু একটু পরিষ্কার রাখো, তাহলেই পুরো মনটা ওখানেই থাকবে।”
পরে নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে তিনি লেখেন, “ব্রেকিং নিউজ: আমারও অনুভূতি আর মতামত আছে! কিন্তু হেডলাইন তৈরি করার বদলে আমাকে আমার কাজ শেষ করতে দাও।”
বিতর্কের গভীরে
এমন বিতর্ক পাকিস্তানে নতুন নয়। অনেক সময় কোনো তারকা করাচি সম্পর্কে সমালোচনামূলক মন্তব্য করলে নেটিজেনরা তা দেশপ্রেমের পরীক্ষায় পরিণত করেন।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিনেত্রী শুধু নিজের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশ করেছেন। করাচির মানুষ বা সংস্কৃতি নিয়ে তিনি কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। বাস্তবতা হলো—করাচি ২ কোটি জনসংখ্যার বিশাল শহর, যেখানে যানজট, আবর্জনা, জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামোগত সংকট দীর্ঘদিনের।
অন্যদিকে লাহোরও আজ বায়ুদূষণে বিশ্বসেরা শহরগুলোর মধ্যে শীর্ষে। আর ইসলামাবাদে বসবাসের খরচ ও জমির দাম দিন দিন বাড়ছে। ফলে প্রতিটি শহরেরই নিজস্ব সমস্যা আছে।
আসলে কী বোঝা দরকার
এই বিতর্ক দেখিয়ে দিল, আমরা হয়তো এখনো ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে সহ্য করতে শিখিনি। করাচি, লাহোর বা ইসলামাবাদ—সব শহরই পাকিস্তানের গর্ব, তবে সবাইকে সেখানে বসবাসে বাধ্য করা যায় না।
সাবা কামারের বক্তব্য হয়তো বিতর্কিত শোনায়, কিন্তু তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাস্তবতা: করাচিকে আরও বাসযোগ্য করার প্রয়াস দরকার।
অভিনেত্রী যা বলেছেন, তা হয়তো একটুখানি ঠাট্টা, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া আমাদের ভাবিয়ে তুলছে—কেন এখনো আমরা ব্যক্তিগত মতামতকে জাতীয় ইস্যু বানিয়ে ফেলি?
হয়তো সময় এসেছে, আমরা একটু হালকা মনেই এই বন্ধুত্বপূর্ণ শহরপ্রেমের প্রতিযোগিতাকে উপভোগ করি।










