হেলথ ডেস্ক: সাভারের গার্মেন্টসে কাজ করেন রোকসানা। বয়স ৩৭। কয়েক মাস ধরে স্তনে অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভব করলেও চিকিৎসকের কাছে যাননি। কারণ, “সময় নেই”, “টাকা নেই”, আর সবচেয়ে বড় কথা, “স্বামী জানলে কী বলবে?” শেষে যখন টিউমার ধরা পড়ল, তখন তা ছড়িয়ে গেছে। চিকিৎসা কঠিন, ব্যয়বহুল। অথচ একটু সচেতনতায়, সময়মতো স্ক্রিনিং করালে হয়তো বেঁচে যেতেন।
রোকসানার মতো হাজারো নারী আজও নিজের শরীর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। শরীর তাদের হলেও তার দায়িত্ব যেন সমাজের অন্যদের হাতে। বিশেষ করে জরায়ু ও স্তনের মতো অঙ্গ, যেগুলো নারী পরিচয়ের সঙ্গে জড়িত তা নিয়ে কথা বলা, পরীক্ষা করানো, বা চিকিৎসা নেওয়াও হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক বাধা।
জরায়ু ও স্তন ক্যানসার: বাংলাদেশে উদ্বেগজনক বাস্তবতা
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যানসার হয় জরায়ু-মুখ (সার্ভিক্যাল ক্যানসার) ও স্তনে। প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং জরায়ু-মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হন প্রায় ৮ হাজার নারী। কিন্তু তাদের অনেকেই ধরা পড়েন দেরিতে, যখন চিকিৎসার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।
প্রাথমিক স্ক্রিনিং বাঁচাতে পারে জীবন
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার ধরা পড়লে তা অনেক সময় পুরোপুরি ভালো হয়। নিয়মিত ভায়া টেস্ট, প্যাপ স্মিয়ার, অথবা স্তনের হাতের পরীক্ষায় অনেক আগেই ধরা পড়তে পারে বিপদ। কিন্তু এর জন্য দরকার সময়, সচেতনতা এবং সবচেয়ে বড় কথা, নারীর নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার।
ভীতি, লজ্জা ও আর্থিক বাধা
অনেক নারী মনে করেন, “আমার কিছু হবে না” বা “লজ্জা পাব ডাক্তার দেখাতে গিয়ে।” কারও আবার স্বামী বা পরিবার অনুমতি না দিলে তিনি চিকিৎসা নিতে পারেন না। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে স্ক্রিনিং হলেও সেসব তথ্য অনেক নারীর জানা নেই। আবার বেসরকারি পরীক্ষার খরচ অনেকের সাধ্যের বাইরে।
নারী-স্বাধীনতা মানেই নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার
যখন একজন নারী বুঝতে পারবেন যে, তার শরীর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তারই, তখনই সচেতনতা বাস্তব রূপ পাবে। স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলাটা লজ্জা নয়, বরং তা অধিকার। প্রজনন স্বাস্থ্য, স্তনের যত্ন, এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনাও—সব কিছু ঘিরে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা থাকা উচিত।
কী করা উচিত এখনই?
- প্রত্যেক উপজেলায় বিনামূল্যে স্ক্রিনিং ক্যাম্প চালু করা
- নারীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও হেল্পলাইন
- পরিবারকে নারীর স্বাস্থ্য সিদ্ধান্তে সহায়ক করে গড়ে তোলা
- গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রচার—“স্ক্রিনিং মানে সতর্কতা, ভয় নয়”
📣 পাঠকের প্রতি আহ্বান
আপনার মা, বোন বা সহকর্মী কি কখনো ক্যানসার স্ক্রিনিং করিয়েছেন? যদি না করে থাকেন, আজই তাদের সঙ্গে কথা বলুন। প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন, কমেন্টে আপনার অভিজ্ঞতা বা মতামত জানান।