Home আন্তর্জাতিক আরব সাগরের তীর ঘেঁষে ওমানের বন্দর অর্থনীতি

আরব সাগরের তীর ঘেঁষে ওমানের বন্দর অর্থনীতি

সালালাহ বন্দর। ছবি সংগৃহীত
মাহবুবুল হক, মাস্কাট: ওমান শুধু মরুভূমি, পাহাড় আর প্রাচীন ইতিহাসের দেশ নয়। এই আরব রাষ্ট্র এখন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে। আরব সাগরের উপকূলে অবস্থিত দেশের প্রধান বন্দরগুলো দুকুম, সালালাহ ও সোহার তাদের কৌশলগত অবস্থান ও উন্নত পরিকাঠামোর কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বিশ্ববাণিজ্যের গতিপথে ওমানের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। হরমুজ প্রণালীর মুখে, আরব সাগরের পাড়ে এই দেশটি ভারত, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে একটি নিখুঁত ট্রানজিট হাব হয়ে উঠেছে। এজন্যই ওমান সরকার ‘ভিশন ২০৪০’ পরিকল্পনার অধীনে বন্দর-ভিত্তিক অর্থনীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে।

দুকুম বন্দর

দুকুম বন্দর: ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক শহর

ওমানের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত দুকুম বন্দর ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZAD) এখন দেশের অর্থনৈতিক নীতির অন্যতম মুখ্য প্রকল্প। এটি শুধু একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প নগরী। এখানে তৈরী হচ্ছে রিফাইনারি, পেট্রোকেমিক্যাল প্লান্ট, ড্রাই ডক, আবাসন এলাকা ও পর্যটনকেন্দ্র। চিন, ভারত ও সৌদি আরবসহ নানা দেশ ইতিমধ্যে এখানে বিনিয়োগ করেছে।

সালালাহ বন্দর: আফ্রিকার সঙ্গমস্থল

ওমানের দক্ষিণাঞ্চলে সালালাহ বন্দর পূর্ব আফ্রিকা, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও ইউরোপের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবেও ব্যাপক পরিচিত। কনটেইনার পরিবহনে এই বন্দর এখন মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ পর্যায়ে। বিশ্বের বড় বড় শিপিং কোম্পানি—যেমন Maersk ও MSC—এখানে নিয়মিত তাদের পণ্য খালাস ও পরিবহন করে থাকে।

সোহার বন্দর

সোহার বন্দর: শিল্প ও রপ্তানির কেন্দ্র

ওমানের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত সোহার বন্দরটি দেশের বৃহৎ শিল্প খাতের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। এই বন্দর ঘিরেই গড়ে উঠেছে বিশাল শিল্প এলাকা, যেখানে অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল, প্লাস্টিক, কেমিক্যাল ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বিকশিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানও সোহার বন্দর ঘিরে পণ্য রপ্তানির সুযোগ খুঁজছে।

পরিকল্পিত উন্নয়ন, কিন্তু চ্যালেঞ্জও রয়েছে

ওমানের বন্দরের বিকাশ শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, বরং আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে এর প্রতিফলন হচ্ছে। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। হাইড্রোকার্বনের ওপর নির্ভরশীলতা, বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট, এবং পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা (বিশেষ করে দুবাই ও জেদ্দার সঙ্গে) ওমানের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওমান নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে—যেখানে সমুদ্র শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি।