বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া:একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, একসঙ্গে প্রবাস জীবন, আর অবশেষেএকসঙ্গে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন সৌদিপ্রবাসীর এমন করুণ বিদায় দগ্ধ করে দিয়েছে পুরো এলাকা। সদ্য বিয়ে করে দেশে আসা এক যুবকেরও শেষ হলো জীবনের স্বপ্নগাথা।
গত রোববার (৩ আগস্ট) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার রামপুর এলাকায় ঘটে এ হৃদয়বিদারক সড়ক দুর্ঘটনা। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মৈন্দ গ্রামের লোকমান হোসেন (২৯) ও তুহিন হাসান (২৮), এবং সরাইল উপজেলার বাড়িউড়া গ্রামের সুমন হোসেন (২৮)। তারা সবাই সৌদিপ্রবাসী ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলেন তিনজনই। ১০-১৫ দিনের মধ্যেই তাদের ফেরার কথা ছিল সৌদি আরবে। তার আগেই রোববার বিকেলে একসঙ্গে বেড়াতে বের হন মোটরসাইকেলে করে। পথে রামপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় তাদের। সেই মুহূর্তেই পেছন থেকে দ্রুতগতির একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুই মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। তীব্র সেই সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিন বন্ধু ও আরও একজন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর প্রাণ হারান আরেকজন।
নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, লোকমান মাত্র ১৭ দিন আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। নতুন জীবনের স্বপ্ন বুকে নিয়ে ফিরেছিলেন প্রিয়জনদের কাছে। তুহিন ও সুমনও ছিলেন কর্মজীবনের মধ্যগগনে। তাদের এই অকাল মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, গোটা মহল্লার মানুষকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে।
সরাইলের বাড়িউড়া গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, “ওরা বিদেশেও একসঙ্গে ছিল, দেশে এসেও একসঙ্গেই চলাফেরা করত। সবসময় ঘুরে বেড়াত। কেউ ভাবতেও পারেনি এমনভাবে একসঙ্গে বিদায় নেবে ওরা।”
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, “চারজনের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়, যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান।”
তিন বন্ধুর হঠাৎ মৃত্যুতে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া। স্তব্ধ পরিবারের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ। প্রবাসে ফিরে যাওয়ার ব্যাগগুলো হয়তো এখনও সাজানোই ছিল, কিন্তু যাত্রা হলো অন্য এক গন্তব্যের দিকে—যেখান থেকে কেউ আর ফিরে আসে না।