বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: চাকরি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির উদ্দেশ্যে চীন থেকে আনা বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইসসহ দুইজনকে আটক করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন-১৩)। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন—চীন ফেরত যাত্রী শাহারুন আলী এবং তার সহযোগী মো. ইকবাল হোসেন জীবন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭৬টি ডিজিটাল ইলেকট্রনিক স্পাই ডিভাইস, ৫০টি ইয়ারপিস, ৩টি ল্যাপটপ ও ৬টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় যাত্রীবেশে আসা শাহারুন আলী এবং তাকে রিসিভ করতে আসা সহযোগী ইকবাল হোসেন জীবনকে আটক করে এপিবিএন অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। তল্লাশিতে তাদের কাছে জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত এসব সরঞ্জাম পাওয়া যায়।
যেভাবে কাজ করে এই স্পাই ডিভাইস
উদ্ধারকৃত ডিভাইসগুলো দেখতে হুবহু ক্রেডিট কার্ডের মতো, যা সাধারণ চোখে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। এপিবিএন কর্মকর্তারা জানান, এই কার্ডের সঙ্গে সিম সংযুক্ত করে পরীক্ষার্থী তা শরীরের সঙ্গে লুকিয়ে রাখেন। অপরপ্রান্তে থাকা জালিয়াত চক্রের সদস্যরা কল দিলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিসিভ হয়। এর সঙ্গে থাকে অতি ক্ষুদ্র অদৃশ্য ইয়ারপিস, যা কানের গভীর গহ্বরে প্রবেশ করানো হয় এবং বাইরে থেকে একেবারেই বোঝা যায় না। পরীক্ষার হলে এই ইয়ারপিসের মাধ্যমেই বাইরে থেকে উত্তর বলে দেওয়া হয়। পরীক্ষা শেষে একটি স্বচ্ছ এক্সট্রাকশন থ্রেড বা সুতার মাধ্যমে ইয়ারপিসটি কান থেকে বের করে আনা হয়।
কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও আইনি ব্যবস্থা
এ বিষয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অপারেশনাল কমান্ডার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোজাম্মেল হক বলেন, “জব্দকৃত ডিভাইসগুলো আমদানি নিষিদ্ধ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা স্বীকার করেছেন, বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বনের জন্যই চীন থেকে এগুলো আনা হয়েছে। আমরা যেকোনো ধরনের অসাধু কার্যক্রম ঠেকাতে নিয়মিত নজরদারি রাখছি।”
এ ঘটনায় শুক্রবার বিমানবন্দর থানায় আটকদের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পূর্বে জালিয়াতির ঘটনায় এমন ডিভাইসের ব্যবহার
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এ ধরনের প্রযুক্তির অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ইতিপূর্বে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা, বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা, এমনকি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাতেও এ ধরনের ‘মাস্টার কার্ড’ বা স্পাই ডিভাইসসহ পরীক্ষার্থীদের হাতেনাতে আটক করার একাধিক নজির রয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যানুযায়ী, গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বড় নিয়োগ পরীক্ষায় হলের ভেতর থেকে কান থেকে ক্ষুদ্র ইয়ারপিস ও শরীর থেকে ক্রেডিট কার্ড সদৃশ ডিভাইসসহ অনেক পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জালিয়াত চক্রের সদস্যরা চড়া টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে এসব ডিভাইস ভাড়া বা বিক্রি করে থাকে। এবারের চালানে বিপুল পরিমাণ ডিভাইস জব্দ হওয়ায় বড় ধরনের জালিয়াতি রোখা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।










