Home আকাশ পথ স্পাইসজেটে মাঝআকাশে ফের ত্রুটি, যাত্রীদের ক্ষোভ

স্পাইসজেটে মাঝআকাশে ফের ত্রুটি, যাত্রীদের ক্ষোভ

এভিয়েশন ডেস্ক: আবারও প্রশ্নের মুখে স্পাইসজেট। এবার মাঝআকাশে উড়ানের সময় এক অস্বাভাবিক ঘটনার শিকার হলো সংস্থার একটি বিমান। গোয়া থেকে পুণে যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই জানলার ফ্রেম খুলে পড়ায় যাত্রীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

বুধবার সকালেই বিমানটি গোয়া বিমানবন্দর থেকে পুণের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু উড়ানের মাঝপথে আচমকাই একটি জানলার ফ্রেম খুলে পড়ে যায়। বিমানের মধ্যে থাকা যাত্রীরা এই ঘটনা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন কেবিন ক্রুরা। তবে সৌভাগ্যবশত এই ঘটনায় কোনও যাত্রী আহত হননি এবং বিমানের ভিতরের চাপও স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিমানের যাত্রীদের একজন পরে এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) একটি ছবি পোস্ট করেন খুলে পড়া জানলার অংশের। তিনি লেখেন, “পুণে যাওয়ার পথে মাঝআকাশে জানলার ফ্রেম আচমকা খুলে পড়ে। এটা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। যাত্রী নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়ল।”

ঘটনার পরে স্পাইসজেট এক বিবৃতিতে জানায়, “বিমান চলাকালীন একটি জানলার প্লাস্টিক ফ্রেম খুলে পড়ে। এতে কোনও কাঠামোগত ক্ষতি হয়নি এবং যাত্রীদের কারও কোনও আঘাত লাগেনি। বিমানের চাপ স্বাভাবিক ছিল, যাত্রী নিরাপত্তার উপর কোনও প্রভাব পড়েনি।”

তবে ঘটনার পর বিমানে ভ্রমণরত যাত্রীরা পরিষ্কারভাবেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ তুলেছেন, যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে সংস্থার উদাসীনতা প্রশ্ন তুলছে এই ঘটনা।

সম্প্রতি একাধিক ঘটনার জেরে স্পাইসজেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা চলছে। এই নতুন ঘটনার পর সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।

আগের ঘটনাগুলো কী বলছে?
স্পাইসজেটের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিকবার বিমানের কারিগরি ত্রুটি, জরুরি অবতরণ এবং রুটিন মেইনটেন্যান্সে অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে মাত্র ১৮ দিনের মধ্যে ৮টি বড় ধরনের ত্রুটির ঘটনা ঘটেছিল এই সংস্থার বিমানে। সে সময় ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তর (ডিজিসিএ) স্পাইসজেটকে ‘নোটিস টু শো কজ’ পাঠিয়েছিল।
মাঝআকাশে জানলার ফ্রেম খোলা কতটা বিপজ্জনক?

বিমানের জানলার মূল অংশ থাকে ট্রিপল-গ্লাস প্রযুক্তিতে সুরক্ষিত। বাইরের দুটি স্তর চাপ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভিতরের প্লাস্টিক ফ্রেম মূলত নান্দনিক ও সামান্য সুরক্ষা দিতেই ব্যবহৃত হয়। তাই ফ্রেম খসে পড়া মানেই তৎক্ষণাৎ প্রাণঘাতী বিপদ নয়—তবে তা নিশ্চিতভাবেই রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতির প্রমাণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন একটি ঘটনা যদি বিমানের প্রেসারাইজড কেবিনে ঘটে, তবে তা ধাপে ধাপে অন্য সমস্যার জন্ম দিতে পারে—যেমন কেবিন প্রেসার লস, জানলার গ্লাসে ফাটল বা আরও গুরুতর বিপদ।

ডিজিসিএ কী বলছে?

প্রাথমিকভাবে ডিজিসিএ এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, এমন ‘অ্যাভিয়েশন ইনসিডেন্ট’ ঘটলে সংস্থাকে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, অতীতে একাধিকবার ডিজিসিএ সতর্কবার্তা দেওয়ার পরও কেন স্পাইসজেটের বিমানে রক্ষণাবেক্ষণ ঘাটতি অব্যাহত রয়েছে?

আর্থিক টানাপোড়েন কি দায়ী?

বিশ্লেষকদের মতে, স্পাইসজেট গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংস্থার বিরুদ্ধে পাইলটদের বকেয়া বেতন, ভাড়ায় আনা বিমানের পেমেন্ট না দেওয়া, এবং প্রযুক্তিগত যন্ত্রাংশে বিনিয়োগ না করার অভিযোগ রয়েছে। এই আর্থিক চাপই হয়তো রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমিয়ে দেওয়ার দিকে ঠেলে দিয়েছে সংস্থাকে।

যাত্রীদের আস্থা ফিরে আসবে কিভাবে?

এই ঘটনায় কোনও যাত্রী আহত না হলেও আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। এক যাত্রী লিখেছেন, “বিমানে বসে জানলার ফ্রেম খুলে পড়া চোখের সামনে দেখেছি। এটা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে শুধু বিবৃতি দিয়ে দায় সেরে নেওয়া চলবে না। প্রয়োজন কঠোর নিয়ন্ত্রণ, প্রতিটি বিমানের রুটিন মেইনটেন্যান্স নিশ্চিতকরণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

এটি নিছক ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ নয়—বরং দীর্ঘদিনের গাফিলতির আরেকটি প্রকাশ। স্পাইসজেট যদি তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নীতিমালা দ্রুত ঢেলে সাজাতে না পারে, তবে যাত্রীদের আস্থা ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। এবং ততদিন পর্যন্ত, মাঝআকাশে জানলার ফ্রেম খুলে পড়া শুধু একটি গল্প থাকবে না—এটি হয়ে উঠতে পারে একটি বড় বিপর্যয়ের ইঙ্গিত।