Home First Lead দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে ফের সক্রিয় স্বর্ণ পাচার সিন্ডিকেট

দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে ফের সক্রিয় স্বর্ণ পাচার সিন্ডিকেট

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, যশোর: প্রায় এক বছরের স্থবিরতা কাটিয়ে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দেশের স্বর্ণ পাচার সিন্ডিকেট। যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তগুলো আবারও হয়ে উঠছে স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট। গত এক মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বেশ কয়েকটি বড় চালান আটক করেছে, যার বাজারমূল্য কয়েক দশ কোটি টাকা। কিন্তু ধরা পড়ছেন শুধু বহনকারী শ্রমিকরা, প্রকৃত হোতারা রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

তথ্য বলছে, যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো এখন পাচারকারীদের প্রধান টার্গেট। ঢাকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা স্বর্ণ এসব রুট হয়ে পৌঁছাচ্ছে ভারতের কলকাতায়। কেবল আগস্ট মাসেই যশোর শহরতলী ও বিভিন্ন সীমান্ত থেকে অন্তত ৬৭টির বেশি স্বর্ণবার জব্দ করেছে বিজিবি। এর বাজারমূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা।

অভিযানের বিবরণে উঠে এসেছে একের পর এক চমকপ্রদ কৌশল। কারও প্যান্টের ভেতরে বিশেষভাবে লুকানো বার, কারও কোমরে বাঁধা, আবার কারও জুতার সোলের মধ্যে গোপন কক্ষ তৈরি করে পাচারের চেষ্টা। চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় তো এক পাচারকারী ধাওয়া খেয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে পানির নিচে বারগুলো ফেলে দেয়, সেখান থেকেই উদ্ধার করে বিজিবি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, প্রতিটি অভিযানে ধরা পড়ছে কেবল বাহকরা। এরা মূলত স্থানীয় ভাড়াটে শ্রমিক, যাদের হাতে বার তুলে দিয়ে পাঠিয়ে দেয় মূল সিন্ডিকেট। ধরা পড়লে এদের জেলে যেতে হয়, আর গডফাদাররা থেকে যায় অক্ষত। এ চক্রের নেপথ্যের মূল খেলোয়াড়দের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই পাচার থামছে না।

গত বছরের সরকার পতনের পর আওয়ামী ঘরানার পুরনো সিন্ডিকেট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও, ফাঁকা জায়গা দখল করে নিয়েছে নতুন নতুন গ্রুপ। এখন পুরনো চক্র ও নতুন সিন্ডিকেট মিলেমিশে সীমান্তে ফের সক্রিয়। স্থানীয় পরিবহন ব্যবস্থা সহজ ও কলকাতার নিকটবর্তী অবস্থানও পাচারকারীদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করেছে।

বিজিবির যশোর ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, “বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

তবে সীমান্ত বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু বহনকারী আটক করে লাভ নেই। প্রকৃত গডফাদারদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় না আনা গেলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল শিগগিরই ফের স্বর্ণ পাচারের অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে।

এদিকে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নেপা সীমান্তে ৫৮ বিজিবি’র বিশেষ অভিযানে ৫ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার দুপুরে ৫০ লাখ টাকারও বেশি মূল্যের ৩টি সোনার বারসহ মো. আমিরুল ইসলাম (৫৫) নামে এক পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। তিনি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার বাঘাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা।

বিজিবি’র মহেশপুর ব্যাটালিয়নের পলিয়ানপুর বিওপির টহল দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সীমান্ত পিলার ৬০/১০৫-আর থেকে ১.৩ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে খোসালপুর গ্রামের মো. দেলোয়ার হোসেনের স-মিল সংলগ্ন পাকা রাস্তার উপর আমিরুল ইসলামকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে। তল্লাশি করে তার কাছ থেকে ৩টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়, যার মোট ওজন ৩৪৯.৮০ গ্রাম। জব্দকৃত স্বর্ণের আনুমানিক বাজারমূল্য ৫০ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৪ টাকা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি স্বর্ণের বারগুলো ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে বহন করছিলেন। এ ঘটনায় মহেশপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং জব্দকৃত স্বর্ণ ঝিনাইদহ জেলা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।