টিএসসির ফুটপাথে দাঁড়িয়ে কেউ খাচ্ছে ফুচকা, কেউ চটপটি, আবার কেউ চামচে করে তুলে নিচ্ছে ভেসে ওঠা টক-ঝাল পানির শেষ ফোঁটাগুলো। এখানকার প্রতিটি খাবারে মিশে আছে কোন এক নির্ভুল স্বাদের গোপন চাবিকাঠি। যেন শালিমারের বাগানে দাঁড়িয়ে খাওয়া এক মুঠো সুখ।
অন্যদিকে, পুরান ঢাকার অলিগলি বুঝিয়ে দেয় কেবল খাবার নয়, একেকটি স্ট্রিট ফুড যেন ইতিহাস বয়ে বেড়ায়। লক্ষ্মীবাজার বা নাজিরা বাজারে সন্ধ্যার পরপরই পিঠা বিক্রির ছোট ছোট দোকানগুলোর সামনে লাইন পড়ে যায়। ভাঁপা পিঠা, চিতই, পুলি, আর মাঝে মাঝে খেজুর গুড়ের ঘ্রাণে মন হারিয়ে যায় খেয়ে না খেয়েই।
ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, ধানমন্ডি কিংবা পরীবাগ প্রত্যেক জায়গার নিজস্ব স্ট্রিট ফুড কালচার আছে। কোনো জায়গায় কাবাবের ধোঁয়া মিশে যায় বাতাসে, কোথাও মোমোর গরম স্টিমে ঘিরে ফেলে সন্ধ্যাকে। লাভ রোডের বার্গার থেকে শুরু করে রিং রোডের চটপটি, সবখানেই যেন কিশোর প্রেমের মতো এক টান আছে একবার খেলে মন চায় আবার খেতে।
এই শহরের খাদ্যপ্রেমীরা চিরকালই জানতেন, স্বাদের জন্য দামি রেস্তোরাঁ নয়, পলিথিনে মোড়া এক চটপটি বা খুপরি দোকানের এক চামচ হালিমই যথেষ্ট। এখানে দাঁড়িয়েই হয়ে যায় বন্ধুত্ব, প্রেম কিংবা আত্মার সংলাপ। ফুচকার মাঝে হাত বাড়িয়ে কেউ হয়ত বলেই ফেলেছে, “আর একটা দিবি?”—যেখানে প্রেমের আভাস লুকিয়ে থাকে টকপানির গভীরে।
তবে এ শহরের এই স্বাদ উৎসবের পাশে কিছু সতর্কতার প্রয়োজনও পড়ে। কিছু স্ট্রিট ফুডে পাওয়া গেছে অস্বাস্থ্যকর উপাদান ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি, যা নিয়ে গবেষকেরা সতর্ক করছেন। কিন্তু তাও যেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ির ঠোঙা হাতে নিয়ে মানুষ ফিরে না তাকায়এ এক অনন্য শহর, অনন্য জীবনধারা।
ঢাকার স্ট্রিট ফুড শুধু খাবার নয়, এটি সংস্কৃতি। এটি শহরের গন্ধ, রঙ, শব্দ ও আবেগের এক মিশ্র উপাখ্যান। এই শহর তার মানুষকে শুধু জীবনই দেয় না, দেয় মুখে তৃপ্তির হাসি একেক চামচে, একেক কামড়।
◊আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!
আপনি কি ঢাকার কোনো স্ট্রিট ফুড স্পটে গিয়েছেন? আপনার প্রিয় খাবার বা অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন মন্তব্যে। আপনার মতামত আমাদের পরবর্তী ফিচার প্রতিবেদনে স্থান পেতে পারে!