বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাঙামাটি: বরকল উপজেলার দুর্গম বরুনাছড়ির কাপ্তাই হ্রদে নীরব শোকের ছায়া নেমেছে। জলরাশির বুকের মাঝে ভেসে উঠেছে এক হাতি শাবকের নিস্তব্ধ দেহ। তার ছোট পায়ের ছাপ, তার চোখের আড়াল, সব যেন এখনও বাতাসে ঝরে থাকা এক শোকাবহ সুর। শাবকটির পাশে মা হাতি এবং ৭-৮টি বন্য হাতির দল যেন চুপচাপ পাহারা দিচ্ছে, প্রাকৃতিক বন্ধনের এক নিখুঁত ছোঁয়া রেখে।
গত মঙ্গলবার সুবলং ইউনিয়নের বরুনাছড়িতে প্রথমবার শাবকটির মৃত দেহ দেখা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সুবলং রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান জানান, হাতি উদ্ধার টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে নিস্তব্ধ বন ও জলরাশির মধ্যকার এক অদৃশ্য বাঁধা তাদের অপেক্ষা করছিল।
বনবিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের যৌথ টিম বুধবার সকাল থেকে সতর্কতার সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। শাবকটির পাশে থাকা মা হাতি ও অন্যান্য বন্য হাতির উপস্থিতি মানব ও প্রকৃতির মধ্যে সূক্ষ্ম সমীকরণ তৈরি করছে। মা হাতি যেন বলছে, “আমার ছানাটিকে সরানো যাবে না, যতই চেষ্টা করো।” এই দৃশ্য মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতিতে সম্পর্কের গভীরতা কখনো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
সুবলং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, মৃত শাবকটি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না কারণ মা হাতি তার পাশে অবস্থান করছে। বন বিভাগের ডিএফও রফিকুজ্জমান শাহ বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ টিমের সাথে আলোচনা করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ চালানো হবে।
বরুনাছড়ির নীরব জলরাশিতে ভেসে থাকা ছোট্ট শাবকটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির রাজত্বে আমরা অতিথি মাত্র। মৃত্যু, শোক এবং সংরক্ষণের এই সংমিশ্রণে বন, জল ও প্রাণ- সবই যেন এক অদ্ভুত কবিতা বলে যাচ্ছে।