বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: রাত গভীর। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামমুখী সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেন ছুটে চলেছে পাহাড়ঘেরা রেলপথ ধরে। যাত্রীরা কেউ ঘুমে, কেউ গল্পে মগ্ন। কিন্তু হঠাৎই লোহাগাড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পার হওয়ার সময় ট্রেনের গতি ধীর হয়ে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রীরা বুঝতে পারেন, ট্রেন থেমে গেছে। হালকা আলোয় দেখা যায় রেললাইনের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে একাধিক হাতি!
দক্ষ চালক ( লোকোমাস্টার) আবদুল আউয়াল তৎক্ষণাৎ গতি হ্রাস করেন, দেন জরুরি ব্রেক। ট্রেন থেমে যায় ঠিক হাতির পাল থেকে নিরাপদ দূরত্বে। চালকের বুদ্ধিমত্তায় প্রাণ বাঁচে হাতিদের, বাঁচে ট্রেনের ৫০০ যাত্রী।
তবে বিশ্রামের সুযোগ মেলেনি। যাত্রীদের কেউ কেউ যখন মোবাইল ফোনে ছবি তুলছেন, ঠিক তখনই একটি হাতি আচমকা এগিয়ে আসে ট্রেনের দিকে। ধাক্কা দেয় বগির একপাশে। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কোচজুড়ে। কেউ চিৎকার করছেন, কেউ জানালার পর্দা সরিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন কী ঘটছে সামনে।
অবস্থার গুরুত্ব বুঝে দ্রুত হুইসেল বাজান চালক। সরে যায় বাকি হাতিরা। আর ফোনে ট্রেন গার্ডকে জানিয়ে চালক ট্রেন চালিয়ে নিয়ে যান গন্তব্যের দিকে। রাত ১টায় নিরাপদেই চট্টগ্রাম পৌঁছায় সৈকত এক্সপ্রেস।
পরে চালক জানান, “আমার চোখে পড়ার পর থেকেই গতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখি। ঠিক সময়ে ট্রেন থামাতে পেরেছি বলেই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে।” তাঁর সতর্কতা ও দ্রুত সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট রেল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ।
এই অভয়ারণ্য রেলপথের ঝুঁকি নতুন নয়। এর আগেও হাতির মৃত্যু ঘটেছে এ রুটে ট্রেনের ধাক্কায়। ২০২৪ সালের ১৩ অক্টোবর এমনই এক দুর্ঘটনায় আহত হাতির মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়। ফলে বারবার উঠে আসছে প্রশ্ন—এই বন্যপথে ট্রেন নিরাপত্তা ও বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা একসঙ্গে কিভাবে নিশ্চিত করা যায়?
প্রকৃতির সঙ্গেই বসবাস মানুষের। ট্রেনও চলবে, বন্য প্রাণীরাও বাঁচবে—এই ভারসাম্য রক্ষা করতে এখন প্রয়োজন আরও কার্যকর উদ্যোগ।