Home First Lead হাতে হাতকড়া, পায়ে শেকল, ৬০ ঘণ্টার অমানবিক যাত্রা

হাতে হাতকড়া, পায়ে শেকল, ৬০ ঘণ্টার অমানবিক যাত্রা

সংগৃহীত ছবি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরলেন ৩১ বাংলাদেশি 

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: চোখেমুখে আতঙ্ক, শরীরে দীর্ঘ ক্লান্তির ছাপ। তবে এর চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে অপমান আর অমানবিকতার গ্লানি। স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরতে হলো, কিন্তু তা সাধারণ যাত্রীর বেশে নয়—হাত-পায়ে শেকলবন্দি অবস্থায়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে আরও ৩১ জন বাংলাদেশিকে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগ পর্যন্ত টানা প্রায় ৬০ ঘণ্টা তাদের হাতে হাতকড়া এবং পায়ে শেকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। নথিপত্রহীন অভিবাসীদের সঙ্গে এমন আচরণকে ‘চরম অমানবিক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

অপরাধীর মতো আচরণ
ফেরত আসা বাংলাদেশিরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ডিটেনশন সেন্টার থেকে বিমানে তোলা এবং দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছানো—পুরো সময়টাই তাদের শেকলবন্দি করে রাখা হয়। এমনকি শৌচাগারে যাওয়ার সময়ও পুরোপুরি মুক্ত করা হয়নি অনেককে। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার মাটিতে পা রাখার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জিম্মায় দেওয়ার পরই কেবল তাদের শেকলমুক্ত করা হয়।

মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন
অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আইনি প্রক্রিয়ায় নথিপত্রহীন কাউকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের অধিকার বা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু একজন মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাতে হাতকড়া ও পায়ে শেকল পরিয়ে রাখার ঘটনাটি কোনোভাবেই সভ্য আচরণের পর্যায়ে পড়ে না। এটি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং অত্যন্ত অমানবিক।”

স্বপ্নভঙ্গ ও ৩০ লাখ টাকার দায়
ফেরত আসাদের অধিকাংশই নোয়াখালী, সিলেট, ফেনী, শরীয়তপুর ও কুমিল্লার বাসিন্দা। কথা বলে জানা গেছে, একেকজন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে উন্নত জীবনের আশায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

ব্র্যাকের তথ্যমতে, ফেরত আসা ৩১ জনের মধ্যে অন্তত ৭ জন সরকারি সংস্থা বিএমইটি’র ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে বৈধভাবে ব্রাজিলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মার্কিন আদালতে আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হওয়ার পর রিক্ত হস্তে, ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরতে হলো তাদের।

ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন। এর অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের বদলে এখন সামরিক ও চার্টার্ড ফ্লাইটে করে গণহারে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ নিয়ে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২৫৭ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হলো।

বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের খাবার এবং বাড়ি ফেরার জন্য জরুরি পরিবহন সহায়তা প্রদান করা হয়। তবে শারীরিক ক্লান্তির চেয়ে শেকলবন্দি হয়ে ফেরার মানসিক ট্রমা তাদের বেশি আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।