বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা
ঢাকা: বিশ্বে প্রতি পাঁচটি অকালমৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য দায়ী হৃদরোগ, যার অন্যতম প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। অথচ শতকরা ৮০ ভাগ হৃদরোগ ও স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৩৪ শতাংশই হৃদরোগজনিত। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা গেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব—এমন তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ব হার্ট দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে।
আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত “উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ ঝুঁকি” শীর্ষক এ ওয়েবিনারে সহযোগিতা করে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য— “Don’t Miss a Beat”।
ওয়েবিনারে জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতি ৪ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ডব্লিউএইচও’র গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৫ অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশে ২ লাখ ৮৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যান, যার ৫২ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। সংস্থার তথ্যে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি ঘণ্টায় ১,০০০ জনের বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে প্রাণ হারান—যার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ হার্টের রক্তনালী সরু করে কার্যকারিতা কমায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এটি সময়মতো শনাক্ত ও ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।”
ডা. গীতা রানী দেবী, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সিবিএইচসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানান, “উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রাপ্যতায় কিছু ঘাটতি থাকলেও বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় ওষুধ সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার বাড়াতে পারলে হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “হৃদরোগ ঝুঁকি কমাতে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন স্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।”
ব্র্যাক জেমস পি. গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, জনসংখ্যা পর্যায়ে সিস্টোলিক রক্তচাপ মাত্র ৫ মি.মি. পারদচাপ কমানো গেলে দেশে স্ট্রোক ১৪ শতাংশ ও হৃদরোগজনিত মৃত্যু ৯ শতাংশ কমানো সম্ভব।”
ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস। আয়োজনটির সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের এবং সঞ্চালনা করেন প্রজ্ঞা’র কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই ওয়েবিনারে অংশ নেন।
-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি