Home খেলাধুলা চীনে বিশ্বের প্রথম রোবোটিক কিকবক্সিং প্রতিযোগিতা: হিউম্যানয়েড ঘুষি চালাচ্ছে

চীনে বিশ্বের প্রথম রোবোটিক কিকবক্সিং প্রতিযোগিতা: হিউম্যানয়েড ঘুষি চালাচ্ছে

ছবি সংগৃহীত

আইটি ডেস্ক:

চীনের পূর্বাঞ্চলের হাংজু শহরে অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বের প্রথম রোবোটিক কিকবক্সিং প্রতিযোগিতা। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হিউম্যানয়েড রোবটগুলো ঘুষি চালানো, প্রতিপক্ষের আঘাত এড়িয়ে যাওয়া এবং দলগত লড়াইয়ে অংশ নিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সম্প্রচারিত এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় চারটি রোবট, যারা এককভাবে এবং দলগতভাবে লড়াই করে। রিংয়ের পাশে থাকা মানুষের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হলেও এসব রোবট ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত, এবং দাবি করা হয়, সবকিছুই সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, এই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল রোবটগুলোকে “অভিজ্ঞতা থেকে শেখার” উপযোগী করে গড়ে তোলা। আয়োজক এক ঘোষক বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এটি এমন একটি মুহূর্ত, যেখানে ইতিহাস ভবিষ্যতের সঙ্গে করমর্দন করছে। আমরা এক ঐতিহাসিক সময়ের সাক্ষী হচ্ছি।”

এই রোবটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে ‘ইউনিট্রি রোবোটিকস’ নামের চীনা কোম্পানির তৈরি দ্বিপদী মডেল ‘জি১’। এই রোবট এর আগেও চীনের নববর্ষের টেলিভিশন গালায় নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে আলোচনায় আসে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এই রোবটের মার্শাল আর্ট প্রদর্শনের ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, এটি স্পিন কিকসহ নানা কৌশল দেখাচ্ছে। এপ্রিলের মধ্যে রোবটকে মানুষদের সঙ্গে কিকবক্সিংয়ে লড়াই করতে দেখা যায়, যেখানে আঘাত খেয়ে মাটিতে পড়লেও মুহূর্তেই উঠে দাঁড়াচ্ছে।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রতিটি রোবটের ওজন মাত্র ৩৫ কেজি এবং উচ্চতা ৪ দশমিক ৩ ফুট, প্রায় আট বছরের শিশুর সমান। তারা প্রতি ঘণ্টায় ৫ মাইল গতিতে চলতে পারে, সর্বোচ্চ ৩ কেজি পর্যন্ত বহন করতে পারে এবং তাদের রয়েছে গতিশীল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ৩৬০ ডিগ্রি গভীরতা বিশ্লেষণ ক্যামেরা ও এআই নির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। ‘জি১’ মডেলটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ১২ হাজার পাউন্ডে।

প্রথমদিকে প্রতিপক্ষের অবস্থান নির্ণয়ে বেশ হিমশিম খায় রোবটগুলো। ফলে বেশ কিছু ‘ঘুষি’ গিয়ে পড়ে ফাঁকা জায়গায়। তবে ধীরে ধীরে রোবটগুলো দ্রুত মানিয়ে নেয়, সামনে ঠেলে আঘাত করে প্রতিপক্ষকে ফেলে দেয়, স্প্লিট ভঙ্গিমায় শরীর বাঁকায় এবং চমৎকারভাবে মোচড় দিয়ে দিক পরিবর্তন করে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক ডিজাইনের সাম্প্রতিক উন্নতিতে লড়াই-ক্ষমতাসম্পন্ন হিউম্যানয়েড তৈরির প্রতিযোগিতায় বিশ্বব্যাপী এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

এদিকে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান টেসলাও তৈরি করছে নিজস্ব হিউম্যানয়েড রোবট ‘অপটিমাস’। জানুয়ারিতে মাস্ক জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে হাজার হাজার রোবট তৈরি হবে, যা টেসলার কারখানায় নানা কাজ করবে।

তবে চীনের ইউনিট্রি ও অ্যাজিবট কোম্পানি ইতিমধ্যে তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী ও উন্নত হিউম্যানয়েড তৈরি করছে, যা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। চীনা রোবটগুলোকে এরই মধ্যে হাফ ম্যারাথন দৌড়ে, চিকিৎসা সহায়তায় ও রুবিকস কিউব সমাধানে দেখা গেছে।

চীনা ইলেকট্রনিকস ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের হিউম্যানয়েড রোবট বাজারের সম্ভাব্য আকার দাঁড়াবে ৮৭০ বিলিয়ন ইউয়ান, অর্থাৎ প্রায় ৮৯ বিলিয়ন পাউন্ড। এ লক্ষ্যে বেইজিং ইতিমধ্যে ১০০ বিলিয়ন পাউন্ড সমমূল্যের একটি বিশেষ রোবোটিক্স ভেঞ্চার ফান্ড ঘোষণা করেছে, যা দেশটির ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যার শ্রম ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

👉 আপনার কি মনে হয় রোবটেরা একদিন মানুষের জায়গা নেবে? মতামত জানান নিচের মন্তব্য ঘরে। চীনের প্রযুক্তি জগতের আরও খবর জানতে চোখ রাখুন বিজনেসটুডে২৪-এ। শেয়ার করুন সবার মাঝে।