তরুণদের অবক্ষয় রোধে জাতীয় সাংস্কৃতিক জাগরণের আহ্বান জানালেন সিটি মেয়র
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি ময়দানে শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হলো হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের ১৬তম হিজরি বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। এই বর্ণিল সাংস্কৃতিক আয়োজনে কুরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত থেকে শুরু করে গজল, কাউয়ালি ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে বিভিন্ন ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠনের নাত খাঁ ও ক্ষুদে শিল্পীরা। বিশেষত, হিজরি বিদায়ী বছর ১৪৪৬ কে আবেগঘন মুহূর্তে বিদায় জানানো হয় অশ্রুসিক্ত সুরে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “হিজরি সনের মাহাত্ম্য ও কারবালার ঐতিহাসিক তাৎপর্য পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তরুণ সমাজের অবক্ষয় ও বিপথগামিতা রোধে আমরা জাতীয়ভাবে চেতনাধর্মী ও নির্মল সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটানোর তাগিদ রাখি। আজকের তরুণরা মাদক, ধূমপান এবং মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির মাধ্যমে বিপথগামী হচ্ছে, যা বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের তরুণ সমাজে নৈতিক বোধের ম্লানতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অযথা ব্যবহারের ফলে যুবসমাজের মনোজগতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রাষ্ট্র ও সমাজকে এগিয়ে এসে তাদের স্বপ্ন ও আশা জাগাতে হবে।”
হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান পীরে ত্বরিকত আল্লামা গোলামুর রহমান আশরফ শাহ এর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মুহাম্মদ এনামুল হক ছিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আলেম, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা শাহ নূর মুহাম্মদ আল কাদেরী প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, “একটি জাতিকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে হলে তার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সুস্থ সংস্কৃতি মানুষের চিন্তা-মনোজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগ থেকে চট্টগ্রামে এই সংস্কৃতির সূচনা প্রশংসনীয়।”
অনুষ্ঠানে দেশের মুসলমানদের কাছে হিজরি নববর্ষের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তারা বলেন, আরব আমিরাত, ইরাক, বাহরাইন, সিরিয়া, জর্ডানসহ বহু মুসলিম দেশে ১ মহররমকে সরকারি ছুটির মাধ্যমে মর্যাদায় পালন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান থাকলেও সরকারি ছুটি না থাকায় এ দিনটির মর্যাদা কমে যায়। তাই সরকার যেন ১ মহররম হিজরি নববর্ষকে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে তা রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালনের উদ্যোগ নেয়, এই দাবি বক্তারা পুনর্ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হিজরি নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী, রাজনীতিবিদ এম সোলাইমান ফরিদ, মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ মুক্তার আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান এম নাছির উদ্দিন মাহমুদ, মাস্টার মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, অধ্যাপক মীর আবদুর রহিম মুনিরী, মাওলানা শেখ মুহাম্মদ আরিফুর রহমান, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবুল মনছুর দৌলতী প্রমুখ।
মিলাদ ও কিয়ামের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি এবং বিশ্বের নিপীড়িত ও মজলুম মানুষের মুক্তির জন্য বিশেষ মুনাজাত পরিচালিত হয়। হাজারো জনতা ওই উৎসবমুখর পরিবেশে অংশগ্রহণ করে নতুন হিজরি বর্ষে আশাবাদ ও ঐক্যের বার্তা নিয়ে বাড়ি ফেরে।
– সংবাদ বিজ্ঞপ্তি