বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ইচ্ছা, পরিশ্রম ও সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে শিশু বয়সেও আল্লাহর কালাম হৃদয়ে ধারণ করা সম্ভব। তার আর একটি প্রমাণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার ৮ বছরের শিশু হাফেজ মোঃ মাশেকুর রহমান। মাত্র ১৩ মাস পাঠদানের মাধ্যমে ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ করে সে হয়ে উঠেছে একজন পূর্ণ হাফেজ।
এই বিস্ময় বালক বিজয়নগর উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামে অবস্থিত হযরত শাহ জালাল (রহ.) ইন্টারন্যাশনাল হিফজুল কোরআন সুন্নীয়া মাদ্রাসার ছাত্র। তার পিতা মোঃ দুলাল মিয়া প্রবাসে কর্মরত। মাশেকুর ৪ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় এবং তার পরিবার আজ গর্বিত, আনন্দিত।
তার চাচা মোঃ বিল্লাল মিয়া বলেন, “আমার ভাইয়ের ছেলে অল্প সময়ে কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া এবং শিক্ষক-উস্তাদদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই, যেন সে ভবিষ্যতে ভালো আলেম হয়।”
মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক মাওলানা হাফেজ ক্বারী কামাল উদ্দিন জানান, “আমরা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রতি নিবিড় নজর ও যত্ন দিয়ে হিফজ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরই মেধাবী হাফেজ তৈরি হচ্ছে।”
প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে হিফজ ও নুরানী বিভাগে আবাসিক ও ডে কেয়ার মিলিয়ে ৯৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। পাঁচজন শিক্ষক এবং সার্বক্ষণিক সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত এই মাদ্রাসাটি ইতিমধ্যেই স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছে।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও এমন বিস্ময়কর শিশু হাফেজদের দেখা যায়।
নাইজেরিয়ার লাগোস শহরের শিশু মুইজ আমিন মাত্র ৪ বছর ৪ মাস বয়সে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করে বিশ্বব্যাপী চমক সৃষ্টি করেছিল।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ১১ বছর বয়সী হুমাইরা নামে এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কিশোরী মাত্র ১১ মাসে হিফজ সম্পন্ন করে আলোচনায় আসে।
মিসরের ফাইয়ুম অঞ্চলের ৫ বছরের ইউসুফ শিশু বয়সেই পুরো কোরআন মুখস্থ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে স্থান পায়।
বাংলাদেশেও এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয়। কিশোরগঞ্জের ৬ বছরের শিশু শিহাব মাত্র ১১ মাসে হিফজ সম্পন্ন করে আলোচিত হয়েছিল। রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ৭ বছরের হাফেজা তাহমিনা আক্তার এবং কুমিল্লায় দুই ভাই মাহিন ও ফাহিম একসঙ্গে হাফেজ হওয়া দেশের মানুষের মাঝে আনন্দ ছড়িয়েছিল।
এই ঘটনাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আল্লাহর কোরআন হৃদয়ে ধারণ করার জন্য বয়স বড় বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়ত, অধ্যবসায় এবং সঠিক দিকনির্দেশনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিশু মাশেকুর রহমান সেই আলোকবর্তিকা হয়ে আজ আমাদের সামনে দাঁড়িয়েছে। তার মতো শিশুদের জীবনগাথা শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির অনুপ্রেরণার উৎস।