পর্যটন নিরাপত্তায় লাল সংকেত
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া ঘাটে ‘দ্যা আটলান্টিক ক্রুজ’ জাহাজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কেবল একজন শ্রমিকের প্রাণ কেড়ে নেয়নি, বরং পর্যটন নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কঙ্কালসার রূপটি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
জেলা প্রশাসনের তাৎক্ষণিক সভা এবং জাহাজ চলাচলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে, এই দুর্ঘটনা পর্যটন সংশ্লিষ্ট মহলে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

কেন এই বিপর্যয়? শনিবার সকালের এই অগ্নিকাণ্ড আমাদের কয়েকটি কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। প্রথমত, জাহাজটি পর্যটক নিয়ে ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে আগুন লাগা প্রমাণ করে যে, যাত্রার আগে রুটিন চেকিং কতটা শিথিল ছিল। দ্বিতীয়ত, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও একজন কর্মচারীর মৃত্যু ইঙ্গিত দেয় যে, জাহাজের ভেতরে অগ্নিনির্বাপণ বা জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা পর্যাপ্ত ছিল না।
সবশেষে, মাঝসমুদ্রে ১৯৪ জন পর্যটক নিয়ে এই ঘটনা ঘটলে তা কেবল জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশের পর্যটনকে প্রশ্নের মুখে ফেলত।
দুর্ঘটনার পর ঘাটে অপেক্ষারত পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ।
আব্দুর রহিম (স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নুনিয়ারছড়া) বললেন, “আমরা তো প্রতিদিন দেখি জাহাজগুলো কেমন গাদাগাদি করে যাত্রী নেয়। আজকে ঘাটে আগুন লাগছে বলে মানুষগুলো বেঁচে গেল। সাগরের মাঝখানে হলে তো এদের বাঁচানো অসম্ভব হতো। প্রশাসনের উচিত শুধু দুর্ঘটনার পর না, সারা বছরই এসব জাহাজের ফিটনেস চেক করা।”
সায়মা আক্তার (ঢাকা থেকে আসা পর্যটক) বললেন, “আমরা এই জাহাজেই ওঠার অপেক্ষায় ছিলাম। চোখের সামনে আগুন দেখে এখনো কাঁপছি। এখন শুনছি কাল থেকে জাহাজ চলবে না। আমাদের নিরাপত্তা বড়, কিন্তু আমাদের মত শত শত পর্যটক যারা টিকিট কেটে বিপাকে পড়লাম, তাদের দায়ভার কে নেবে? অব্যবস্থাপনা এখানে চরমে।”
করিম উল্লাহ (ঘাটের মাঝি) বলেন, “মারা যাওয়া নুর কামাল আমার পরিচিত ছিল। গরিব মানুষগুলোই সবসময় বলির পাঁঠা হয়। জাহাজ মালিকরা ফিটনেস ছাড়াই জাহাজ নামায়, আর মাসুল দেয় আমাদের মত সাধারণ কর্মীরা।”
প্রশাসক এম এ মান্নান কর্তৃক ‘ফিটনেস শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জাহাজ না চালানোর’ সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই নজরদারি কি কেবল দুর্ঘটনার কয়েকদিন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে?
পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর এবং বিআইডাব্লিউটিএ-কে নিয়মিত ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ বা আকস্মিক পরিদর্শনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। পর্যটন মানে শুধু মুনাফা নয়, পর্যটন মানে আস্থার প্রতিফলন। ‘দ্যা আটলান্টিক ক্রুজ’-এর ছাই যেন সেই আস্থাকে পুড়িয়ে না ফেলে, এটাই এখন সাধারণ মানুষের দাবি।










