বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
কর্মসূত্রে আমেরিকায় থাকা বহু ভারতীয় নাগরিকের জন্য ডিসেম্বর মাসটি যে আনন্দের নয়, বরং চরম বিড়ম্বনার, তা এখন আর গোপন নেই। ছুটির মরসুমে দেশে এসে পরিবার পরিজনের সঙ্গে সময় কাটানোর স্বপ্ন নিয়ে যাঁরা ভারতে পা রেখেছিলেন, তাঁদের বড় অংশই এখন কার্যত আটকে। আমেরিকায় ফেরা অনিশ্চিত। কারণ, ওয়ার্ক পারমিট বা এইচ-১বি ভিসা পুনর্নবীকরণের জন্য নেওয়া অ্যাপয়েন্টমেন্ট হঠাৎ করেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে যাঁদের সাক্ষাৎকারের দিন ছিল, এমন হাজার হাজার ভারতীয়ের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল হয়েছে। নতুন তারিখ দেওয়া হচ্ছে কয়েক মাস পরে। তাও সেই তারিখ আদৌ থাকবে কি না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। ফলে ‘বিশ্বগুরু’ হওয়ার স্বপ্ন দেখা দেশের বহু দক্ষ কর্মী এখন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েই ধন্দে।
মার্কিন বিদেশ দফতরের ব্যাখ্যা অবশ্য বেশ কৌশলী। ইমেলে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংক্রান্ত একটি নতুন নিরাপত্তা নিয়ম চালু করেছেন। উদ্দেশ্য, কেউ যেন আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি না হন। সেই নিরাপত্তা যাচাই করতে গিয়েই নাকি সব দেরি। তবে কাকতালীয় ভাবে এই দেরির ধাক্কা সবচেয়ে বেশি লাগছে ভারতীয় আবেদনকারীদের গায়েই।
এইচ-১বি ভিসা এমন একটি ব্যবস্থা, যার জোরে বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় প্রযুক্তি ও দক্ষ কর্মীরা আমেরিকার অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে এসেছেন। সর্বোচ্চ ছয় বছর পর্যন্ত সেখানে কাজ করার সুযোগ মেলে এই ভিসায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই ভিসা যেন ট্রাম্প প্রশাসনের চোখের কাঁটা। কিছু দিন আগেই ঘোষণা হয়েছে, বিদেশি দক্ষ কর্মী নিয়োগ করতে চাইলে মার্কিন সংস্থাগুলিকে এক লক্ষ ডলার পর্যন্ত সরকারের হাতে তুলে দিতে হবে। অর্থাৎ দক্ষতা থাকলেই চলবে না, তার সঙ্গে মোটা অঙ্কের মূল্যও দিতে হবে।
ট্রাম্প শিবিরের যুক্তি, এইচ-১বি ভিসার কারণে আমেরিকানদের চাকরি চলে যাচ্ছে। দেশীয় নাগরিকেরা বঞ্চিত হচ্ছেন। যদিও বাস্তবে বহু মার্কিন সংস্থা বলছে, ভারতীয় ও অন্যান্য বিদেশি কর্মীদের দক্ষতা ছাড়া প্রযুক্তি ও কর্পোরেট দুনিয়া অচল। তবু রাজনৈতিক বক্তব্যের জোরে কড়াকড়ি বাড়ছেই।
এর ফল ভোগ করছেন সাধারণ প্রবাসীরা। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় নিয়ম মেনেই যাঁরা দেশে ফিরেছিলেন, তাঁরা এখন আটকে। কবে আবার অফিসে ফিরবেন, আদৌ ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা চরমে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিলের কোনও স্পষ্ট কারণ বা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকায় প্রশ্ন উঠছে, এই নিয়ম কি কেবল ভারতীয়দের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ হচ্ছে।
এ অবস্থায় আমাজনের মতো মার্কিন বহুজাতিক সংস্থাও কর্মীদের সতর্ক করতে বাধ্য হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে যাঁদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল, তাঁদের আমেরিকা না ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, শেষ মুহূর্তে সেগুলিও বাতিল হতে পারে। যাঁরা বৈধ ভিসা স্ট্যাম্প নিয়ে বিদেশে গিয়েছেন, তাঁদেরও তড়িঘড়ি ফিরতে বলা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ভারতীয় প্রবাসীদের যে নিশ্চিন্ত দিন শেষ, তা স্পষ্ট। আর যারা ভারত বিরোধী মনোভাব পোষণ করেন, তাঁদের কাছে এই পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে এক ধরনের তৃপ্তির খবর। বিশ্ব জয়ের গল্প শোনানো দেশের দক্ষ কর্মীরাই যখন দেশে ফিরে আটকে যান, তখন বিদ্রূপের হাসি চাপা রাখা কঠিনই বটে।
এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com










