বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কলকাতা: সোমবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার তিলপি গ্রামে ঘটল এক অকল্পনীয় দুর্ঘটনা। মাছ ধরতে গিয়ে কই মাছ গলায় আটকে মৃত্যু হল বছর ২২–এর তরুণ আজিজুর মোল্লার। জীবনের শুরুতেই এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা গ্রাম। ডোবার পাড়ে মাছ ধরার নিরীহ আনন্দমুহূর্ত যে এক যুবকের জীবনের শেষ অধ্যায় হয়ে উঠবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
আজিজুর পেশায় একজন দর্জি ছিলেন। গ্রামের লোকজনের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন একজন হাসিখুশি, পরিশ্রমী ও নম্র যুবক হিসেবে। কাজের ফাঁকে মাছ ধরা ছিল তাঁর নেশার মতো। সেই নেশাই পরিণত হল মৃত্যুর ফাঁদে। ঘটনার দিন সকালবেলা তিনি একা বসে ছিলেন গ্রামের পাশের ডোবার পাড়ে। ছিপ ফেলেই একটি মাঝারি আকারের কই মাছ ধরেন। মাছটি সাময়িকভাবে মুখে রেখে আরেকটি মাছ ধরতে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় ঘটে যায় বিপদ। কই মাছটি মুখ থেকে পিছলে গলায় ঢুকে যায় এবং শ্বাসনালী আটকে দেয়।
ঘটনার আকস্মিকতায় কাতরাতে থাকেন আজিজুর। তাঁর মুখ দিয়ে শব্দ বেরোচ্ছিল না, চোখেমুখে ছিল অসহায় যন্ত্রণা। পাশে থাকা গ্রামবাসীরা দ্রুত তাঁর দিক ছুটে যান এবং তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এত দ্রুত অবস্থা জটিল হয়ে যায় যে, হাসপাতালেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করতে হয়।
চিকিৎসকদের মতে, গলায় মাছ আটকে যাওয়ার ফলে শ্বাসনালী সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং অক্সিজেন না পৌঁছনোয় কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে। চিকিৎসার সময় এমন দুর্ঘটনার খুব কম নজির পাওয়া যায় বলেই জানান তাঁরা।
এই মৃত্যুসংবাদ গ্রামে পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আজিজুরের মা, বাবা ও ভাইবোনেরা। চারদিকে শুনতে পাওয়া যায় শুধুই দীর্ঘশ্বাস আর শোকবার্তা। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, “এমন মৃত্যু কেউ কখনও কল্পনাও করেনি। সে তো সবে জীবন গুছিয়ে নিচ্ছিল। জামার অর্ডার ছিল হাতে, হয়তো বিকেলেই বসত সেলাইয়ে।”
জয়নগর থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এটি একটি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু। তদন্তে অন্য কোনও সন্দেহজনক দিক মেলেনি।
আজিজুরের এই মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনার গল্প নয়, বরং এটি আমাদের অজান্তেই জীবনের অনিশ্চয়তা ও সতর্কতার বার্তা দিয়ে গেল। এমন এক তাজা প্রাণ, যার জীবন ছিল স্বপ্নে ভরা, যার হাতে ছিল সেলাইয়ের সূচ, অথচ তার মৃত্যু হলো একটুখানি অসাবধানতায় একটি মাছের কারণে।