বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে এখন উৎসবের আমেজ। বড়দিন, শীতকালীন ছুটি এবং থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখর পর্যটন নগরী। তবে এই বিপুল আনন্দের সমান্তরালে পর্যটকদের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ। মাত্রাতিরিক্ত খরচ, পরিবহন ও খাবারের উচ্চমূল্য এবং সৈকত এলাকার অব্যবস্থাপনা পর্যটকদের ভ্রমণের আনন্দকে ফিকে করে দিচ্ছে।
সরেজমিনে পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কক্সবাজারে এখন ‘পিক আওয়ার’ চলায় প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। নরসিংদী থেকে আসা ব্যবসায়ী তৌহিদ আলম বলেন, “এখানে সবকিছুর দাম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। অটোচালকরা সামান্য দূরত্বের জন্যও চড়া ভাড়া দাবি করছেন। এমনকি সাধারণ মানের খাবারের দামও রাখা হচ্ছে অনেক উচ্চ।”
একই সুর মিরসরাই থেকে আসা পর্যটক সুকান্ত হোড়ের কণ্ঠে। তিনি জানান, হোটেল রুম বুকিং দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগে থেকে বুকিং না থাকলে রুম পাওয়া যেমন দুষ্কর, তেমনি রুম পেলেও কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া আদায় করছেন। সাধারণ পর্যটকদের দাবি, প্রশাসনের কঠোর তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বড় অংকের আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, ২৫ থেকে ২৭ তারিখের ছুটি এবং বছরের শেষ সময় (৩১ ডিসেম্বর) উপলক্ষ্যে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “মাসের এই শেষ সময়ে পর্যটকদের যে আগমন ঘটেছে, তাতে সব মিলিয়ে পর্যটন খাতে শত কোটি টাকার বাণিজ্য ছাড়িয়ে যাবে।”
সৈকত এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকদের অবাধ বিচরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত উৎপাত। পর্যটকরা নিরিবিলি সময় কাটাতে চাইলেও বারবার তাদের বিরক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়াও সৈকতের পরিচ্ছন্নতা এবং শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি পর্যটকদের চোখে পড়েছে।
পর্যটকরা মনে করেন, প্রশাসনের নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং কঠোর নজরদারি থাকলে এই নৈরাজ্য ঠেকানো সম্ভব হতো। বিশেষ করে খাবারের মূল্য তালিকা এবং পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কম দেখা যাচ্ছে।
কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি। তবে বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য আর অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে পর্যটকরা বিমুখ হতে পারেন। বিশাল বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি










