বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
গাছকে জাপটে জড়িয়ে আছে বাঘিনী। দু’চোখ বোজা। মুখের অভিব্যক্তি অনেক না বলা কথা বলে দেয়। বন্যপ্রাণী হলেও। এমনই এক বিরল মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেছেন এক রুশ ফোটোগ্রাফার। পূর্ব রাশিয়ার ঘন জঙ্গলে সাইবেরিয়ান বাঘের নাগাল পাওয়াই দুষ্কর। সেখানে এমন ছবি ভাবাই যায় না। আর সে কারণেই এই দুর্লভ ছবি কুড়ি সালের সেরা ওয়াল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফির তকমা পেয়ে গিয়েছে। আর সেরা ফোটোগ্রাফার সার্গেই গোর্শকভ।
১১ মাসের চেষ্টায় এমন ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন সার্গেই। লন্ডনের ন্যাচালার হিস্ট্রি মিউজিয়ামে সেরা ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফারের পুরস্কার হাতে নেওয়ার সময়, সার্গেই বলেছেন, প্রায় এক বছরের ধৈর্য ও অপেক্ষার ফল মিলেছে। সাইবেরিয়ান আমুর টাইগারকে ক্যামেরার নাগালে তো পাওয়া গিয়েছেই, উপড়ি পাওয়া এই বিরল মুহূর্ত। ৪৯ হাজার ছবির মধ্যে থেকে সার্গেইয়ের তোলা আলিঙ্গনরত বাঘিনীর ছবি সেরার সেরা পুরস্কার জিতে নিয়েছে।
বিচারকদের প্যানেলে থাকা রজ কিডম্যান কক্স বলেছেন, পূর্ব রাশিয়ার একেবারে কোর এলাকায় এই বাঘিনীর ছবি তুলেছেন সার্গেই। যেখানে বাঘেদের আনাগোনা আছে সেখানে ক্যামেরা, সেন্সর বসিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতেন রুশ ফোটোগ্রাফার। কথায় বলে না সবুরে মেওয়া ফলে, সেটাই হয়েছে। আর এই ছবি অনেক অর্থ বহন করে। প্রকৃতি আর বন্যপ্রাণ এই দুইয়ের যুগলবন্দি এই ছবিকে দুর্লভ করেছে। একই সঙ্গে বিপন্ন হতে বসা সাইবেরিয়ান বাঘদের সংরক্ষণের কথাও তুলে ধরেছে।
এই ছবি কেন সেরা, তার দুটি কারণ আছে–
প্রথমত, বিরল প্রজাতির সাইবেরিয়ান বাঘের ছবি। এদের আমুর টাইগারও বলে। রাশিয়ার একেবারে পূর্ব সীমান্তে ঘন জঙ্গলে এই বাঘের দেখা মেলে। তাছাড়া উত্তর চিন, কোরিয়ার উপকূলেও আমুর টাইগারদের দেখা মেলে, তবে কম। এদের আরও কয়েকটা পোশাকি নাম আছে—মাঞ্চুরিয়ান টাইগার, কোরিয়ান টাইগার, উসুরিয়ান টাইগার ইত্যাদি। সাধারণ রয়্যাল বেঙ্গলের থেকে সাইবেরিয়ান ডোরাকাটারা আকারে কিছুটা বড়। আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল, ঋতুভেদে এই বাঘদের গায়ের রঙে বদল আসে। ওজন সাধারণভাবে ১৫০ থেকে ৩০০ কিলোগ্রাম। হরিণ ও বুনো শুয়োর এদের পছন্দের শিকার। সংরক্ষণের অভাবে এই সাইবেরিয়ান বাঘরা এখন বিপন্নের খাতায় নাম লিখিয়েছে। একটা সময় এই বাঘদের চামড়া কোরিয়াতে রফতানি করা হত। যে কারণে শয়ে শয়ে সাইবেরিয়ান টাইগার নিধন করা হত। ২০০৫ সালে এই বাঘদের সংখ্যা গুনতিতে গিয়ে ঠেকেছিল। ২০১৫ সালে এদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৪৮০-তে। তবে এরপরে ২০১৫-র শেষে গিয়ে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ৫৪০টিতে গিয়ে পৌঁছয়। এখনকার সমীক্ষা বলছে, আমুর বাঘদের সংখ্যা ৫৬২-র কাছাকাছি। কিন্তু লাগাতার চোরাশিকারে এদের অস্তিত্ব বিপন্ন। এমন বাঘের ছবি সামনে এনে রুশ ফোটোগ্রাফার বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছেন বন্যপ্রাণী সংগঠনগুলিকে।
দ্বিতীয়ত, আলিঙ্গনরত বাঘিনী। এরও কারণ আছে। সাধারণ বাঘদের এলাকা ভাগ করা থাকে। তাই কোন এলাকা কাদের সেটা সুস্পষ্ট করে বোঝাতে বাঘরাই তাদের চিহ্ন ছেড়ে যায়। সেই চিহ্ন কেমন? গাছের গায়ে নিজেদের গন্ধ ছড়িয়ে যাওয়া। অথবা আঁচড় কেটে অস্তিত্ব জানান দেওয়া। অনেক সময় বাঘিনীদের প্রস্রাবেও আকর্ষিত হয়ে দূর থেকে নির্দিষ্ট এলাকায় চলে আসে পুরুষ বাঘরা। মিলনের আগে এমন ইঙ্গিত দেয় বাঘিনীরা। রাশিয়ার পূর্ব প্রান্তের ওই জঙ্গলের প্রায় ২০০০ কিলোমিটার এলাকায় পুরুষ বাঘদের দেখা মেলে বেশি, বাঘিনীদের জন্য বরাদ্দ ৪৫০ কিলোমিটার এলাকা। বাঘিনীর সংখ্যাও কম। তাই অনেক সময় গাছের গায়ে নিজেদের গন্ধ ছড়িয়ে পুরুষ বাঘদের জানান দেয় বাঘিনীরা। একে বলে ছাপ ছেড়ে যাওয়া। বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এই ছাপ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা আকছাড় ঘটে। কিন্তু রাশিয়ার জঙ্গলে আমুর বাঘিনীর এমন আলিঙ্গনরত দৃশ্য সত্যিই বিরল। তাই এই ছবিকেই সেরা হিসেবে মনোনীত করেছেন বিচারকরা।