বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: প্রতিবেশি ভারতের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রানজিট সুবিধাকে অর্থনৈতিক কার্যক্রম হিসেবেই বিবেচনা হচ্ছে সব মহলে। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে ট্রানজিট সুবিধাকে কেবল ভারত নয়, নেপাল ভুটান পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা।
ট্রানজিট সফল হলে বাংলাদেশ হবে রিজিওনাল হাব: ড. সেলিম উদ্দিন
বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সেলিম উদ্দিন, এফসিএ, এফসিএমএ বিজনেসটুডে২৪ কে বলেন: বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধায় ভারতের বেনিফিট হবে প্রচুর, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদেরও বেনিফিট কম নয়। বন্দর এবং সড়ক পথ ব্যবহার থেকে অতিরিক্ত আয় হবে। অবকাঠামো উন্নয়নে ৭.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি আছে ভারতের সাথে। চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল নির্মাণ, মোংলা বন্দর থেকে ফোরলেন হাইওয়ে স্থাপন, আশুগঞ্জে ইনল্যান্ড রিভারপোর্ট তৈরিসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর জন্য এই ঋণ দেয়া হচ্ছে।
ড. সেলিম উদ্দিনি মনে করেন, বাংলাদেশ যদি তার স্বার্থ রক্ষা করে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা সফলভাবে দিতে পারে, তাহলে আগামীতে বাংলাদেশ হবে রিজিওনাল হাব। মটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্ট আছে বাংলাদেশ-ভারত-ভুটান-নেপালের মধ্যে। তার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে। কানেক্টিভিটি দিয়ে আমরা আগামীতে পেতে পারি শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা, যদি সম্পর্ক থাকে ভাল।
শুধুমাত্র ভারত নয়, ভূ-বেষ্টিত ভুটান, নেপাল পর্যন্ত যদি বাংলাদেশ ট্রানজিট সুবিধা সম্প্রসারণ করতে পারে তাহলে আগামীতে বাংলাদেশ হবে বে অব বেঙ্গল রিজিওনাল হাব। ডিপ সি পোর্ট হয়ে গেলে প্রচুর সাসটেইনবল ইনকাম হবে ট্রানজিট সুবিধা থেকে। ভুটান নেপাল থেকে পানিবিদ্যুৎ পাওয়াও হবে আমাদের জন্য সহজতর। অভিমত ড. সেলিম উদ্দিন-এর।
ট্রানজিট দু’দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন: আব্দুস সালাম
বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট শিল্পপতি মোহাম্মদ আব্দুস সালামও প্রতিবেশি দেশকে ট্রানজিট সুবিধা প্রদানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। বলেন, এটা দু’দেশের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন এবং দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে। আমাদের নিজস্ব চাহিদাকে পূরণ করে যদি ভারতকে তার ভূ-বেষ্টিত রাজ্যগুলোর জন্য এই সেবা দেয়া যায় তাহলে সেটা অবশ্যই ভাল দিক। ট্রানজিট সুবিধা প্রদান করতে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার মান এবং দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে বলে তিনি আশা করেন। তাছাড়া, ট্রানজিট সেবা প্রদান করে বিভিন্ন খাতে আমাদের অতিরিক্ত আয়ও হবে বলে উল্লেখ করেন এই শিল্পপতি।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এক নবদিগন্তের সূচনা: তরফদার আমিন
চিটাগাং চেম্বারের সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল অপারেটর সাইফপাওয়ারটেক লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, ট্রানজিট চুক্তির আওতায় ভারতের চট্টগ্রাম বন্দর সুবিধা ব্যবহার শুরু করার মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এক নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে।ট্রানজিটের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দু’দেশের অর্থনীতিতে। ভারতের ভূ-বেষ্টিত ‘সাত বোন’ খ্যাত রাজ্যগুলিতে কম সময়ে কম খরচে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস পৌঁছবে। তাতে সেখানেও অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তরফদার আমিন।
অর্থনৈতিক বেনিফিট অবশ্যই: শফিকুল আলম জুয়েল
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল আলম জুয়েল বিজনেসটুডে২৪ কে বলেন, ট্রানজিটের অর্থনৈতিক বেনিফিট অবশ্যই রয়েছে। বন্দর, কাস্টমস, সড়ক ও জনপথ বিভাগ পাবে বাড়তি রেভিনিউ। পরিবহন মালিকরাও অতিরিক্ত আয়র সুযোগ পাবেন। তবে, একটি বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে যে প্রতিবেশি দেশকে এই সুবিধা দিতে গিয়ে স্থানীয়রা যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয়। প্রচলিত নিয়মে জাহাজ বার্থিং হওয়া আবশ্যক। তিনি ট্রানজিট সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্যক্রম দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন যেন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন না হয়। কাস্টমস স্ক্যানিং নিখুঁত হওয়া এবং দ্রুত ডেলিভারি হওয়া আবশ্যক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অগ্রাধিকার বার্থিং-এ কোন সমস্যা হবে না: শাহেদ সরওয়ার
বিভিন্ন উন্নত দেশ শুধুমাত্র ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে আয় করছে কোটি কোটি ডলার। সেই সুযোগ বিদ্যমান আমাদেরও। সেটাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। চৌধুরী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের পরিচালক শাহেদ সরওয়ার এই অভিমত দিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রানজিট সুবিধা থেকে শিপিং, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং, সিএন্ডএফ, ট্রান্সপোর্ট সবার ব্যবসা বাড়বে। আর অগ্রাধিকার ভিত্তিতের ট্রানজিটের জাহাজকে বার্থিং দেয়া হলেও তার তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা একেবারে কম। চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিদিন ১১টি জাহাজ বার্থিং দেয়। সেখানে যদি দেশীয় পতাকাবাহি একটি এবং ট্রানজিটের একটি জাহাজ অগ্রাধিকারে বার্থিং পায় তাতে তেমন কোন অসুবিধার কিছু নেই আপাতত।