নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশের নীলফামারীর ডিমলার কালিগঞ্জ জিরোপয়েন্টে অবস্থিত যৌথবাঁধ তীব্র স্রোতের আঘাতে হুমকির মুখে পড়েছে। বিধ্বস্ত হলে নদী প্রবাহ লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়ার বাইশপুকুর পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ৫২.২৮ মিটার, যা বিপৎসীমা ৫২.১৫ মিটারের চেয়ে ১৩ সেন্টিমিটার বেশি। এই অবস্থায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচগেট খোলা রাখা হয়েছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা ও আশেপাশের এলাকায় নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় যৌথবাঁধ রক্ষার চেষ্টা শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বস্তা ভরে বাঁধকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ডোমার ও ডিমলার সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যৌথবাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন।
এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখরিবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছচাঁপানী ইউনিয়নের চরগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, সদর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, সকাল ৯টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুর ১২টায় পানি ৫২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৩টায় ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টায় পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, তিস্তা অববাহিকায় লাল সংকেত জারি করা হয়েছে। স্থানীয়রা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচগেট খোলা রেখেও পানি নিঃসরণের কাজ যথাযথভাবে হচ্ছে না। ফাড বাইপাস খুলে দিলে যৌথবাঁধ রক্ষা পেতে পারে।
পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তিস্তা তীরবর্তী এলাকার মানুষ রাতব্যাপী নির্ঘুম অবস্থায় কাটাচ্ছেন। স্থানীয় প্রশাসন রাত থেকে মাইকিং করেছে এবং জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
রোববার বিকেল থেকে শুরু হওয়া পানি বৃদ্ধি তিস্তা তীরবর্তী রাস্তা ও গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। স্থানীয়রা পরিবার ও গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন।
উল্লেখ্য, তিস্তা নদী রক্ষা ও ‘গো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে রংপুর বিভাগের তিস্তা তীরবর্তী পাঁচ জেলার জনগণ পদযাত্রা ও স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু।
নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধার তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় একযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।