শিপিং ডেস্ক:
কেরালার কোচি উপকূলে লাইবেরীয়া পতাকাবাহী জাহাজ এমএসসি এলসা থ্রি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় কেরালা হাইকোর্ট সরকারের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে যে, উদ্ধার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারি অর্থ নয়, বরং জাহাজ মালিকপক্ষ এমএসসি কোম্পানির কাছ থেকে খরচ আদায় করতে হবে।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, “জনসাধারণের করের টাকায় বেসরকারি জাহাজ কোম্পানির অবহেলার বোঝা টানা যায় না। এই ক্ষতির দায় সরকার নয়, কোম্পানিকেই বহন করতে হবে।” আদালত সরকারকে এডমিরালটি অ্যাকট ২০১৭–এর আওতায় আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে বলেছে।

🌊 পরিবেশগত বিপর্যয়: সামুদ্রিক প্রাণজগত হুমকিতে
২৫ মে গভীর সমুদ্রে ডুবে যাওয়া এলসা ৩–তে ছিল প্রায় ৬৪০টি কনটেইনার, যার মধ্যে অন্তত ১৩টি ছিল বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থবাহী। ডুবির পর উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ‘নারডলস’ নামে পরিচিত প্লাস্টিক পিলেট। এসব সাদা ছোট ছোট দানাদার বস্তু মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীর অন্ত্রে ঢুকে খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
কোচির চেরাই সমুদ্রতীর, মুন্নাম্বাম, কাঞ্জিরামুট্টম, মারারিকুলাম, আলাপ্পুঝা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ইতিমধ্যে নারডলস ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিকে ‘সমুদ্রের মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের বড় উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ইতিমধ্যে বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে কে বা কারা এই দূষণের জন্য দায়ী, তা নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

🛳️ উদ্ধার তৎপরতার সর্বশেষ অবস্থা
জাহাজটি এখনো সমুদ্রের গভীরে (প্রায় ৪০ নটিক্যাল মাইল দূরে) উল্টে অবস্থান করছে। এমএসসি বা সংশ্লিষ্ট কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা এখনো পুরোপুরি উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করেনি। কেরালা মেরিন বোর্ড এবং ভারতীয় কোস্টগার্ড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
তবে ডুবন্ত জাহাজ থেকে তেল ও রাসায়নিক তরল লিক হওয়ার আশঙ্কা থাকায়, উপকূল রক্ষা বাহিনী স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সতর্ক থাকতে বলেছে। ফিশিং কমিউনিটির দাবি, মাছের উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে এই দূষণের কারণে।
⚖️ আইনি লড়াই ও ক্ষতিপূরণ দাবি
কেরালা পুলিশ ইতিমধ্যে জাহাজ মালিক, ক্যাপ্টেন ও এমএসসি’র বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করেছে। মামলায় দাহ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অবহেলাজনিত ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ এবং মৎস্যজীবীদের জীবনধারায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছে।
হাইকোর্ট বলেছে, “এই ধরণের দুর্ঘটনার জন্য পরিবেশ ও জীবন–জীবিকা ধ্বংস হলে তার দায় অপরাধীদেরই নিতে হবে। ক্ষতিপূরণ এমএসসিকেই দিতে হবে।”
🎯 সারসংক্ষেপ
- জাহাজ ডুবে গিয়ে সামুদ্রিক এলাকায় নারডলস দূষণ ছড়িয়েছে
- বিপন্ন হয়েছে উপকূলীয় সামুদ্রিক প্রাণী ও মাছের উৎপাদন
- উদ্ধার কার্যক্রম এমএসসি এখনো শুরু করেনি, ক্ষোভ বাড়ছে
- সরকারি ব্যয় নয়, মালিকপক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ
- হাইকোর্টের রায়কে পরিবেশবাদী ও মৎস্যজীবী সংগঠন স্বাগত জানিয়েছে