বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেল পাকিস্তানে নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয়, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং কবে দায়িত্ব নেবে নতুন সরকার। কোন কোন দল সরকারের শরিক হবে, স্পষ্ট নয় তাও।
জানা যাচ্ছে সেনা বাহিনীর মত বদলের কারণে এই বিলম্ব। রাজনীতিতে কেউ স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নয়। পাক রাজনীতির ক্ষমতার ভরকেন্দ্র সেনা বাহিনী সেই সূত্র মেনে জেলবন্দি ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
পাক মিডিয়ার খবর সে দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কয়েকজন শীর্ষ কর্তা জেলে গিয়ে ইমরানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারপরই ইমরান তাঁদের দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে ওমর আয়ুব খানকে বেছে নিয়েছেন।
ওমর আবার সম্পর্কে প্রাক্তন সেনা শাসক আয়ুব খানের নাতি। সেনার সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। সেনা ঘনিষ্ঠ আয়ুবকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী বেছে নিয়ে ইমরান আইএসআইয়ের সঙ্গে ডিলে প্রাথমিক সায় দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত বোঝাপড়া না হলে পাকিস্তান ফের সেনা শাসনের মুখোমুখি হতে পারে বলে মনে করছেন পাক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। সেনা প্রধান আসিফ মুনীর খানের তৎপরতায় অনেকেই সন্দিহান। বর্তমান সেনা প্রধান আবার বাহিনীতে তাঁর পূর্বসূরিদের তুলনায় বেশি জনপ্রিয়।
চলতি সপ্তাহের গোড়ায় ঠিক ছিল নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ) এবং বিলাবল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টির জোট সরকার গঠন করবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন প্রথম দলের শাহবাজ শরিফ। তিনি নওয়াজের ভাই এবং আর এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী। জোটের ফরমুলা মতো পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা ছিল বিলাবলের বাবা আসিফ আলি জারদারির। তিনিও সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং পিপিপি’র কো-চেয়ারম্যান।
এখন জানা যাচ্ছে এই ফরমুলায় সায় দিয়েও পিছু হাঁটার চেষ্টা করছেন নওয়াজ শরিফ। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজের উপলব্ধি জারদারিকে রাষ্ট্রপতি পদে রেখে নিশ্চিন্তে সরকার চালানো কঠিন হবে। নির্দলদের সমর্থনের স্থায়িত্ব নিয়েও তাঁর সংশয় আছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি ভাইকে প্রধানমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিরোধী বেঞ্চে বসার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন।
অন্যদিকে, সেনাও মনে করছে, ইমরানের দলের প্রতি যে সমর্থনের ঢেউ উঠেছে তা উপেক্ষা করা সঠিক হবে না। ফল প্রকাশের পর থেকেই ইমরানের কর্মী-সমর্থকেরা রাজপথে। তাঁদের অভিযোগ, সেনার সাহায্যে ভোট চুরি করে অন্তত একশো আসনে তাদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।
৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহেরিক-ই-ইনসাফ দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়াই করতে পারেনি। দলের নির্বাচনী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাট কেড়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারপরও ভোটে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা জেলে আটক ইমরানের দল।
ভোটে কোনও দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সবাইকে অবাক করে দিয়ে সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করেছে পিটিআই সমর্থিত নির্দলেরা। জানা যাচ্ছে, এই বাস্তবতা মেনে সেনাও ইমরানের সঙ্গে বোঝাপড়া করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। পাক মিডিয়ার খবর, ইমরানকে আইএসআই শর্ত দিয়েছে সেনা ছাউনিতে তাঁর সমর্থকদের হামলার জন্য তিনি ক্ষমা চাইলে মামলার ফাঁস থেকে রেহাই পেতে পারেন।
সেনার এই প্রস্তাবে ইমরান এখনও সায় দেননি। কারণ, রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী জেলে আটক থাকা অবস্থায় ভোটে এমন সাড়া পাওয়ার অন্যতম কারণ সেনার উপর মানুষের রোষ।
পাকিস্তানে সেনা বাহিনী সম্পর্কে চালু কথা হল, তারা কোনও যুদ্ধে জেতেনি, আবার হারেনি কোনও নির্বাচনে। এই কথার অর্থ, পড়শি দেশে ভোটে হার-জিতের পিছনে সেনার সিদ্ধান্তই আসল। এবারের নির্বাচনে তারা ইমরানের দলকে মুছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এই প্রথম সেনা নির্বাচনে হেরে গিয়েছে। ছয়মাসের বেশি জেলে আটক ইমরানের দল সমর্থিত নির্দলই সবচেয়ে বেশি আসনে জয়লাভ করেছে।