Home রাজনীতি পোস্টার সর্বস্ব রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত

পোস্টার সর্বস্ব রাজনীতি গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত

ছবি : এ আই

সম্পাদকীয়

বর্তমান বাংলাদেশে রাজনীতি এক অদ্ভুত রূপ নিচ্ছে। ত্যাগ-আদর্শ-সংগ্রামের রাজনীতিকে পেছনে ফেলে, এখন দৃশ্যপটে দৃশ্যমান এক প্রবণতা পোস্টার সর্বস্ব রাজনীতি। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত, এমনকি দূরদराज মফস্বল এলাকাও বাদ যাচ্ছে না পোস্টারের আগ্রাসন থেকে। অকারণে এবং অতিরিক্ত মাত্রায় এই পোস্টার-ব্যানার সংস্কৃতি কেবল চোখে লাগে না, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ পথকেও ঘোলাটে করে তোলে।

রাজনৈতিক পোস্টার একটি সময় ছিল নেতৃবৃন্দের কার্যক্রম প্রচার, নির্বাচনী বার্তা কিংবা দলীয় কর্মসূচি জানানোর মাধ্যম। এখন সেটি রূপ নিয়েছে আত্মপ্রচারের বাহনে। নেতার সঙ্গে নিজের ছবি, জন্মদিনের শুভেচ্ছা, এমনকি ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষেও নিজেদের মুখচ্ছবিসমেত শুভেচ্ছাবার্তা—এসব কিছুতে ভরে যাচ্ছে দেয়াল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ব্যস্ত মোড় কিংবা গ্রামীণ দোকানের সাইনবোর্ড পর্যন্ত। কে কত বড়, কে কত বিশ্বস্ত, কে কার “আনুগত্যের প্রতীক”—এ প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে।

সবচেয়ে দুঃখজনক দিক হলো, এই পোস্টারবাজি অনেকক্ষেত্রেই অপকর্মের আবরণ হয়ে উঠছে। দেখা যাচ্ছে, চাঁদাবাজ, দখলবাজ কিংবা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা অপরাধীরা নিজেদের বড় নেতার অনুসারী দেখিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে পোস্টার লাগিয়ে। সাধারণ মানুষ এসব দেখে বিভ্রান্ত হয়—তারা বুঝতে পারে না কে প্রকৃত নেতা, আর কে ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে সুবিধাভোগী।

রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এই অপ্রয়োজনীয় ও অপসংস্কৃতিমূলক প্রতিযোগিতাকে নিরুৎসাহিত করা। গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের সেবা, জনসম্পৃক্ততা ও নীতিনিষ্ঠতা। পোস্টার লাগিয়ে নেতা হওয়া যায় না, বরং ত্যাগ ও সততার মাধ্যমে মানুষকে নেতৃত্ব দেওয়া যায়। রাজনীতিকে যদি আদর্শের ভিত্তিতে ফিরিয়ে না আনা যায়, তবে সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে—যেখানে নেতা তৈরি হবে পোস্টারে, আর রাজনীতি হবে ভ্রান্ত পরিচয়ের ব্যবসা।

আমরা চাই, রাজনীতিতে ফিরে আসুক সৌজন্য, সংযম আর আদর্শ। পোস্টারে নয়, নেতা হোক মানুষের পাশে দাঁড়ানো এক জীবন্ত প্রতীক।