Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য তিন শ’বছরের সাক্ষী বজরা শাহী মসজিদ

তিন শ’বছরের সাক্ষী বজরা শাহী মসজিদ

বজরা শাহী মসজিদ। ছবি সংগৃহীত

মাহবুবুর রহমান, নোয়াখালী: নোয়াখালী ইতিহাস ঐতিহ্যের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন নোয়াখালীর বজরা শাহী মসজিদ। প্রায় ৩০০ বছর আগে নির্মাণ করা এ মসজিদটি ইতিহাসের কালের সাক্ষী হয়ে এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এর নির্মাণ শৈলী এখনও বিমোহিত করে নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের কাছে। এতে মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত ও দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন লোকজন ছুটে আসেন এখানে। কেউ আবার আসেন মানত করে ও কবর জিয়ারত উদ্দেশ্য।

জানা যায়, দিল্লীর বিখ্যাত শাহী জামে মসজিদের অনুকরণে মোগল জমিদার আমান উল্লাহ খান ১১৫৪ হিজরি, ১১৩৯ বাংলা মোতাবেক ১৭৪১ খ্রি. অর্থাৎ প্রায় তিনশ বছর আগে বজরা শাহী মসজিদ নির্মাণ করেন। যা আজও মোগল স্থাপত্য শিল্পের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন নোয়াখালীর বজরা শাহী মসজিদটি সরকারি গেজেটে প্রত্নসম্পদ হিসেবে থাকলেও সরকারিভাবে কোনো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেই। দর্শনার্থীদের অনুদানেই মসজিদের খতিব, মুয়াজ্জিনসহ চারজনের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়।

সরেজমিনে মসজিদের চারপাশে দেখা গেছে, জমিদার আমান উল্ল্যা আমান ৩০ একর জমির ওপর উঁচু পাড়যুক্ত একটি বিশাল দীঘি খনন করেন। এ দিঘীর পশ্চিম পাড়ে মনোরম পরিবেশে আকর্ষণীয় তোরণ বিশিষ্ট প্রায় ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য, ৭৪ ফুট প্রস্থ এবং প্রায় ২০ ফুট উঁচু তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই ঐতিহাসিক মসজিদ নির্মাণ করেন। ২০ ফুট উঁচু থেকে ভিত তৈরি করা হয়েছে। মসজিদে প্রবেশের জন্য আছে তিনটি ধনুকাকৃতির দরজা। প্রবেশপথের ওপরে কয়েকটি গম্বুজ। কেবলা দেয়ালে তিনটি কারুকার্য খচিত মিনার। শিলালিপি ও দেয়ালে খোদায় করা ফুল, লতাপাতাসহ বাহারি নকশা মসজিদটিকে দিয়েছে অনন্য শৈল্পিক আকর্ষণ

প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আছে মসজিদটির মসজিদের চারপাশ। মসজিদের পূর্বে তিনটি, উত্তরে ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি ছোট ছোট দরজা আছে। নেই কোনো জানালা। ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব অত্যন্ত কারুকার্যময়। যার চারকোণে চারটি সুন্দর মিনার রয়েছে যা এর সৌন্দর্যকে অনেক গুণ বৃদ্ধি করেছে। মসজিদের পূর্বদিকে যে তোরণ রয়েছে, তোরণের দোতলার ওপরে উঁচু মিনারটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মসজিদের গায়ে লাগানো হয় চীন দেশীয় গ্লাস।

thumbnail_Screenshot_20250304_122623_Google

ঐতিহাসিক এই মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে ২৬ বছর। বর্তমানে এই মসজিদটি বজরা শাহী মসজিদ নামে পরিচিত। এটি নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার উত্তরে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের প্রধান সড়ক থেকে পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত। এছাড়া ঢাকা থেকে নোয়াখালী জেলা সদরে যাওয়ার পথে সোনাইমুড়ী বজরা হাসপাতালের সামনে নেমে পায়ে হেঁটে কয়েক মিনিটে সামনে গেলে দেখা মিলবে ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটির।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ঐতিহাসিক এই মসজিদের প্রথম ইমাম হিসেবে নিয়োজিত হন মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের বিশেষ অনুরোধে পবিত্র মক্কা শরীফের বাসিন্দা তৎকালীন অন্যতম বুজুর্গ আলেম হজরত মাওলানা শাহ আবু সিদ্দিকী। যোগ্যতা অনুসারে আজও এ মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তার বংশধররা। বর্তমানে প্রথম ইমামের সপ্তম পুরুষ ইমাম হাসান সিদ্দিকী মসজিদের পাঞ্জেগানা ইমামের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আর জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন খতিব।

বর্তমানে মসজিদটিতে প্রায় দুই হাজারের বেশি মুসল্লি একসঙ্গে জুমার নামাজ পড়তে পারেন। মূল মসজিদটিকে ঠিক রেখে পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। যার নিচ তলায় নারীরা এবং দ্বিতীয় তলায় পুরুষরা নামাজ আদায় করেন।

thumbnail_InShot_20250304_122916403

সূবর্ণচরের বাসিন্দা মুজাহিদুল ইসলাম জানান, অনেকদিন ধরে নিয়ত করেছি এই মসজিদে নামাজ পড়বো। সবার কাছ থেকে এ মসজিদের নাম শুনেছি। এখানে এসে নামাজ পড়েছি। খুবই ভালো লাগল। আসলেই দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। বাইরে যেমন সুন্দর, ভেতরেও তেমনই।

লাকসামের বাসিন্দা আবদুল হাই বলেন, নিজের কিছু সমস্যা রয়েছে তাই মানত করেছি এখানে আসার। আজকে আসলাম সঙ্গে কবর জিয়ারত করলাম।

পাঞ্জেগানা ইমাম ইমাম হাসান সিদ্দিকী জানান, আমার পূর্বপুরুষেরা এই মসজিদের খেদমত করেছে। আল্লাহ আমাদেরকে এ মসজিদের খেদমত করার সুযোগ করে দিয়েছে। বছরজুড়ে বিভিন্ন মানুষ এখানে নিয়ত ও মানতের পাশাপাশি আসেন নামাজ পড়তে।

মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতী মীর কাশেম জানান, প্রাচীন এই মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার জন্য অনেকেই অনেক দূর থেকে আসেন। শুধু নামাজ নয়, মসজিদের সুদৃশ্য কারুকাজ দেখার জন্য নারী-পুরুষ, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অনেকেই আসেন। মোঘল আমলের তৈরি প্রাচীন এই মসজিদে দুই বছর থরে জুমার নামাজে খতিব হিসেবে বয়ান ও ইমামতি করা খেদমত করে যাচ্ছি।

সূত্র: ঢাকা মেইল