Home আন্তর্জাতিক নিঝুম রাতে আলোকোজ্জ্বল লন্ডন

নিঝুম রাতে আলোকোজ্জ্বল লন্ডন

মধ্যরাতের প্রার্থনা শেষে ঘরে ঘরে বড়দিনের আনন্দ

আজহার মুনিম শাফিন, লন্ডন: তিলতিল করে ফুরিয়ে আসা ঘড়ির কাঁটা যখন রাত ১২টার ঘর পেরিয়ে গেল, লন্ডনের আকাশজুড়ে তখন উৎসবের সুর। বর্তমানে লন্ডনে ভোররাত তিনটা। গির্জাগুলোতে মধ্যরাতের বিশেষ প্রার্থনা বা ‘মিডনাইট মাস’ শেষে শহর এখন এক মায়াবী নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন। ঘরে ঘরে এখন শুরু হয়েছে ব্যক্তিগত উদ্‌যাপন।

বড়দিনের উৎসবের মূল সূচনা হয়েছে সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল, ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে এবং সাউথওয়ার্ক ক্যাথেড্রালের বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে। যিশু খ্রিস্টের জন্মক্ষণকে স্বাগত জানাতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ মোমবাতি হাতে প্রার্থনায় শামিল হন। বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে এই আধ্যাত্মিক আনুষ্ঠানিকতা। প্রার্থনা শেষে মানুষ যখন ঘরে ফিরছিলেন, তখন তাদের কন্ঠে ছিল বড়দিনের ক্যারল।

লন্ডনের প্রথা অনুযায়ী আজ ২৫শে ডিসেম্বর পুরো শহর যেন এক স্থির ছবি। বাস, টিউব (আন্ডারগ্রাউন্ড) এবং ন্যাশনাল রেলসহ সব ধরণের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। বড়দিনের এই দিনটিতে লন্ডনের ব্যস্ততম রাস্তাগুলোও থাকে জনশূন্য। কেবল জরুরি সেবা ছাড়া আর কিছুই সচল নেই। এটি এমন এক সময় যখন এই যান্ত্রিক শহরটি কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও জিরিয়ে নেয়।

রাস্তায় মানুষ বা গাড়ি না থাকলেও অক্সফোর্ড স্ট্রিট, রিজেন্ট স্ট্রিট এবং কভেন্ট গার্ডেনের আলোকসজ্জাগুলো এই গভীর রাতেও আকাশকে আলোকিত করে রেখেছে। কোটি কোটি এলইডি বাতির মায়াবী আলো তুষারভেজা রাস্তায় প্রতিফলিত হয়ে এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি করেছে। পিকাডিলি সার্কাসের বিশালাকার স্ক্রিনগুলোতে ভেসে উঠছে বড়দিনের শুভেচ্ছা বার্তা।

রাস্তা শান্ত থাকলেও লন্ডনের ঘরগুলো এখন মুখর। গভীর রাতে সান্তা ক্লজের প্রতীক্ষায় থাকা শিশুরা ঘুমিয়ে পড়লেও, পরিবারের বড়রা এখন ব্যস্ত উপহার সাজাতে। কয়েক ঘণ্টা পর সকাল হলেই শুরু হবে উপহার বিনিময়ের ধুম। কিচেনগুলো থেকে আসতে শুরু করেছে ঐতিহ্যবাহী ‘ক্রিসমাস পুডিং’ আর ‘টার্কি রোস্ট’-এর সুগন্ধ।

ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষায় এখন লন্ডনবাসী। সকাল হতেই পরিবার ও পরিজনদের সাথে নিয়ে দীর্ঘ মধ্যাহ্নভোজ আর হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠবে পুরো শহর। রাতের এই নিস্তব্ধতা আসলে আগামীকালের এক বিশাল আনন্দের প্রস্তুতি মাত্র।