Home রেমিটেন্স যোদ্ধাদের খবর ব্রিকলেনের বুকে বাংলা টাউন: প্রবাসে বাঙালির গৌরবগাথা

ব্রিকলেনের বুকে বাংলা টাউন: প্রবাসে বাঙালির গৌরবগাথা

আজহার মুনিম, লন্ডন: লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে একখণ্ড বাংলাদেশ এই ভাবনাটিই বাস্তবে রূপ পেয়েছে ব্রিকলেনে, যেখানে গড়ে উঠেছে ‘বাংলা টাউন’। এটি কেবল একটি এলাকা নয়, বরং প্রবাসী বাঙালিদের শতবছরের শ্রম, সংগ্রাম ও স্বপ্নের ফল। টাওয়ার হ্যামলেটস বরোতে অবস্থিত ব্রিকলেন এখন পরিচিত একপ্রকার ‘ছোট বাংলাদেশ’ হিসেবে, যা আজকের লন্ডনের সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্যে এক গর্বিত প্রতিচ্ছবি।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে ভারতবর্ষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থাকলেও, বাংলাদেশি অভিবাসীদের স্থায়ী বসতি শুরু হয় মূলত ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে। সে সময় পূর্ব লন্ডনে কাজের খোঁজে আসা সিলেটি মুসলিমরা স্থানীয় টেক্সটাইল কারখানাগুলোতে শ্রমিক হিসেবে যুক্ত হন। সস্তা বাসস্থান, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও একে অপরের সহায়তায় ধীরে ধীরে তারা গড়ে তোলেন একটি শক্তিশালী কমিউনিটি।

ব্রিকলেনের অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষার সাইনবোর্ড, রেস্টুরেন্টের গন্ধে ভেসে আসা বিরিয়ানি, ভর্তা কিংবা গরুর মাংসের ঘ্রাণ সব মিলিয়ে মনে হয় যেন ঢাকা কিংবা সিলেটের কোনো জনপদ। এখানকার ‘কারি রেস্টুরেন্ট’ গুলো এতটাই জনপ্রিয় যে একে অনেকেই বলেন ‘কারি ক্যাপিটাল অব ইউরোপ’।

তবে এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম। বহু বছর ব্রিকলেন ছিল বর্ণবৈষম্য, দারিদ্র্য আর বেকারত্বে জর্জরিত। স্থানীয় বাঙালিরা বারবার হেনস্তার শিকার হয়েছেন, হুমকি পেয়েছেন চরম ডানপন্থীদের কাছ থেকে। কিন্তু ভেঙে না পড়ে, একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যম ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন।

বর্তমানে ব্রিকলেনের ‘বাংলা টাউন’ শুধুই একটি বসতি নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানে রয়েছে বাংলা স্কুল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, এমনকি বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রও। ব্রিকলেন এখন ব্রিটিশ ইতিহাসের অংশ, যেখানে মিশে আছে বাংলাদেশি অভিবাসনের জটিল ইতিহাস ও গর্বিত উত্তরাধিকার।

বাংলা টাউন আজ শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের গর্ব নয়, বরং বহুসংস্কৃতির ব্রিটেনে সহাবস্থানের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এখানকার প্রতিটি দোকান, রেস্টুরেন্ট, ভাষা ও মুখবন্ধে লুকিয়ে আছে একেকটি গল্প—সংগ্রামের, আত্মপরিচয়ের আর সফল হয়ে ওঠার