Home স্বাস্থ্য নীরব ঘাতক ‘ব্রেইন স্ট্রোক’: লক্ষণ ও জরুরি প্রতিকার

নীরব ঘাতক ‘ব্রেইন স্ট্রোক’: লক্ষণ ও জরুরি প্রতিকার

হেলথ ডেস্ক:

স্ট্রোক একটি অত্যন্ত জরুরি স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি হৃৎপিণ্ডের রোগ নয়, বরং মস্তিষ্কের রক্তনালীর রোগ। সময়মতো সচেতন না হলে স্ট্রোকের ফলে পঙ্গুত্ব এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

১. ব্রেইন স্ট্রোক কি?

মস্তিষ্কের কোনো অংশে যখন রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বা রক্তনালী ফেটে যায়, তখন মস্তিষ্কের কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাবে মারা যেতে শুরু করে। একেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্ট্রোক বলা হয়। এটি মূলত দুই প্রকার:

ইস্কেমিক স্ট্রোক: রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়া।

হেমোরেজিক স্ট্রোক: রক্তনালী ফেটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া।

২. কাদের ঝুঁকি বেশি?

স্ট্রোক যেকোনো বয়সে হতে পারে, তবে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে:

যাদের উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure) আছে।

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী।

যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি।

অতিরিক্ত ধূমপায়ী বা মদ্যপায়ী।

শারীরিক পরিশ্রম কম করেন এমন ব্যক্তি এবং অতিরিক্ত ওজনের মানুষ।

যাদের হৃদরোগ বা হার্টে সমস্যা আছে।

৩. স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ (BE FAST ফর্মুলা)

স্ট্রোক হওয়ার আগে বা হওয়ার মুহূর্তে শরীর কিছু সংকেত দেয়। চিকিৎসকরা একে ‘BE FAST’ নাম দিয়েছেন:

B (Balance): হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা বা মাথা ঘোরা।

E (Eyes): হঠাৎ চোখে ঝাপসা দেখা বা এক চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া।

F (Face): মুখের এক পাশ বেঁকে যাওয়া (হাসতে বললে এক দিক ঝুলে থাকে)।

A (Arms): এক হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া বা শক্তি না পাওয়া।

S (Speech): কথা জড়িয়ে যাওয়া বা কথা বলতে না পারা।

T (Time): উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া।

৪. স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক করণীয়

স্ট্রোকের পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময়কে ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলা হয়। এই সময়ের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা পেলে রোগী সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রোগীকে কাত করে শুইয়ে দিন যাতে মুখ থেকে লালা বা বমি বের হয়ে যেতে পারে।

টাইট পোশাক বা বেল্ট ঢিলা করে দিন।

ভুলেও মুখে কোনো পানি বা ওষুধ দেবেন না। এতে খাবার ফুসফুসে ঢুকে রোগী মারা যেতে পারে।

দ্রুত এমন হাসপাতালে নিয়ে যান যেখানে সিটি স্ক্যান (CT Scan) এবং ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ চালু আছে।

৫. প্রতিরোধ ও সতর্কতা

রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়মিত চেক করুন এবং নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

ধূমপান ও জর্দা সম্পূর্ণ বর্জন করুন।

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করুন।

অতিরিক্ত লবণ এবং চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।

 স্ট্রোক কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয় বা জিনের আছর নয়। এটি একটি জরুরি শারীরিক অবস্থা। কুসংস্কার বা ঝাড়ফুঁকের পেছনে সময় নষ্ট না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন।