বিনোদন ডেস্ক:
মুম্বাইয়ের বান্দ্রার একটি ক্যাফেতে এখন মাঝরাতে দেখা যায় একদল তরুণ-তরুণী ‘মাহজং’ (এক ধরণের টাইলস গেম) খেলায় মত্ত। কোলাবার কোনো এক বইয়ের দোকানে মধ্যরাতে বসেছে লেখক-পাঠক আড্ডা। শহরজুড়ে ফ্লাডলাইটের আলোয় এখন আর কেবল ড্যান্স ফ্লোর নয়, জ্বলে উঠছে পিকলবল কোর্টও। মুম্বাইয়ের ২০ ও ৩০ বছর বয়সী তরুণদের কাছে রাতের আড্ডা এখন অনেক বেশি অর্থবহ এবং স্বাস্থ্য সচেতন।
অ্যালকোহল বিমুখ প্রজন্ম
২০২৫ সালের একটি গবেষণা বলছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ আগের বছরের তুলনায় কম মদ্যপান করছেন। মুম্বাইয়ের উদ্যোক্তা বেদিকা চামরিয়া জানান, “সাময়িক উত্তেজনার চেয়ে পরের দিন সকালে শরীর কেমন থাকবে, তা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” অন্যদিকে, ডাটা ইঞ্জিনিয়ার যতীন জাওয়ালে ছোটবেলা থেকেই অ্যালকোহল এড়িয়ে চলছেন। তাদের কাছে আনন্দ মানে এখন ক্যাফেতে বসে ধীরেসুস্থে চুমুক দেওয়া কিংবা কোনো প্রদর্শনী বা মিউজিয়ামে সময় কাটানো।
মনোবিজ্ঞানী ধারা ঘুনটলার মতে, জেন-জি (Gen Z) এবং মিলেনিয়ালরা এখন এমন কাজ খুঁজছেন যা বিনোদনের পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি দেয়। কম অ্যালকোহল মানেই ভালো ঘুম, কম উদ্বেগ এবং পরদিন সকালে কোনো অবসাদ না থাকা।
‘জিরো-প্রুফ’ ককটেলের জোয়ার
অ্যালকোহলহীন পানীয়ের বাজার এখন তুঙ্গে। ২০২৯ সালের মধ্যে ভারতে এই বাজার ২.১০ ট্রিলিয়ন রুপিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুম্বাইয়ের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলোও এই ধারায় গা ভাসিয়েছে। ‘সান্তে স্পা কুইজিন’ পরিবেশন করছে অ্যাক্টিভেটেড চারকোল লেমনেড, আবার ‘স্কারলেট হাউস’ দিচ্ছে মালাইকা অরোরার বিশেষ হাইড্রেশন বার।
অ্যালকোহলবিহীন জিন, রাম ও হুইস্কির বিকল্প ব্র্যান্ডগুলো এখন বার মেনুতে জায়গা করে নিচ্ছে। এমনকি ওটিটি জায়ান্ট প্রাইম ভিডিওর সহযোগিতায় বাজারে এসেছে আদা-লেবুর বিশেষ মল্ট পানীয় ‘জুগাড়ো’।
নতুন সামাজিক আড্ডা: বোর্ড গেম থেকে বুক ক্লাব
মুম্বাইয়ের ভাইলে পার্লেতে ‘বোম্বে বোর্ড গেম ক্লাব’ এখন আইনজীবী থেকে শুরু করে ডিজাইনারদের প্রিয় গন্তব্য। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা রনাক চিতালিয়া জানান, “মানুষ এখন কাজ শেষে দল বেঁধে এখানে বোর্ড গেম খেলতে আসে।”
অন্যদিকে, ২০১৬ সালে মাত্র ১১ জন নিয়ে শুরু হওয়া ‘ব্রোক বিবলিওফাইলস’ বুক ক্লাবটি এখন প্রতি মাসে বিশাল আড্ডার আয়োজন করে। প্রতিষ্ঠাতা নীরব মেহতা হাসিমুখে বলেন, “বই হলো কেবল একটা উসিলা, মূল উদ্দেশ্য হলো ভালো খাবার আর চমৎকার আলাপ।” এমনকি পেডার রোডে বরুণ গোয়ালানির আয়োজনে ‘মার্ডার মিস্ট্রি নাইট’ (রহস্য সমাধান আড্ডা) এখন দারুণ জনপ্রিয়।
সুস্থতাই এখন নতুন বিলাসিতা
জুহুর মানসভি মেহতা মনে করেন, ভেষজ চা কিংবা নাইট ট্রেকিংয়ের (রাতে পাহাড়ে হাঁটা) যে আনন্দ, তা মদ্যপানের আড্ডায় পাওয়া অসম্ভব। পোস্ট-প্যানডেমিক বা করোনা পরবর্তী বিশ্বে মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা চায় এমন এক পরিবেশ যেখানে সামাজিকতা বজায় থাকবে, কিন্তু তা শরীরের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
মুম্বাইয়ের রাতগুলো এখন আর কেবল ধোঁয়া আর পানীয়ের গ্লাসে সীমাবদ্ধ নেই। লাইব্রেরির পাতায়, খেলার মাঠে আর গভীর আলাপে এখন জেগে থাকে মায়ানগরী। আর এই নতুন ট্রেন্ডে আনন্দের রেশ পরদিন সূর্যোদয়ের পরেও থেকে যায় অমলিন।
আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও এমন ‘অ্যালকোহল-মুক্ত’ বা সচেতন আড্ডার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে? আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের জানান।










