বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: পৌষের হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় কাঁপছে উত্তরের জনপদ রাজশাহী। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে জেলাটিতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে পুরো বরেন্দ্র অঞ্চল, যার ফলে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম স্থবিরতা।
আজ ভোরে সূর্যোদয় হলেও সকাল ৮টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি রাজশাহীতে। চারদিকে ঘন কুয়াশার দাপটে দৃষ্টিসীমা এতটাই কমে এসেছে যে, মহাসড়কগুলোতে হেডলাইট ও ফগার লাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। আবহাওয়া সহকারী তারেক আজিজ জানিয়েছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের আর্দ্রতা শতভাগ থাকায় শীতের তীব্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অনুভূত হচ্ছে।
শীতের এই রুদ্রমূর্তি সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের ওপর। পেটের তাগিদে কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করেই ভোরে কাজের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে দিনমজুরদের।
নগরীর বিনোদপুর বাজারে কাজের আশায় দাঁড়িয়ে থাকা চারঘাটের শ্রমিক শরীফ ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, “শরীরে কয়েকটা গরম কাপড় জড়িয়েও শীত মানছে না বাবা। হাত-পা অবশ হয়ে আসছে, তাও বসে থাকার উপায় নেই। কাজ না করলে উনুন জ্বলবে না।”
একই অবস্থা অটোরিকশা চালক সাগর আলীর। তিনি জানান, ঠান্ডার কারণে রাস্তায় মানুষ কম, ফলে আয়ও কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। একদিকে হাড়কাঁপানো শীত, অন্যদিকে পকেটে টান—এই দুইয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন তারা।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় (মাত্র ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শীতের কামড় এতটাই প্রকট। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে আনুষ্ঠানিকভাবে জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার ধারের ভাসমান মানুষেরা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। তবে এই কঠিন সময়ে আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। দুস্থ ও অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণের প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে।
প্রকৃতির এই রুক্ষতা রাজশাহীবাসীকে এক কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে। এখন প্রয়োজন বিত্তবানদের মানবিক সহযোগিতা, যাতে একটি গরম কাপড় অন্তত কোনো এক অসহায় মানুষের শীতের রাতকে একটু হলেও উষ্ণ করতে পারে।










