বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:ফ্রান্স থেকে ২৬টি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার জন্য প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে ভারত। প্রায় ৬৩,০০০ কোটি টাকার (৭.৪ বিলিয়ন ডলারের) এই চুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও জোরদার করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী, ফরাসি মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশন নির্মিত এই যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে একক ও যুগ্ম আসনের রাফাল মডেল উভয়ই থাকবে। এগুলো ভারতীয় নৌবাহিনীর নিজস্ব তৈরি বিমানবাহী রণতরী, যেমন আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্য থেকে পরিচালিত হবে এবং পুরনো রুশ নির্মিত মিগ-২৯কে বিমানের স্থান দখল করবে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে বলেন, “আমরা ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।”
এই নতুন রাফাল যুদ্ধবিমানগুলো যুক্ত হবে ইতিমধ্যেই ভারতের কাছে থাকা ৩৬টি রাফালের সঙ্গে, যেগুলো আগেই ফ্রান্স থেকে ক্রয় করা হয়েছে এবং বর্তমানে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতের সামরিক সরঞ্জাম আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে এই নতুন সংযোজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্স সফরের সময় বাসতিল দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সময়েই ২৬টি রাফাল ক্রয়ের পরিকল্পনা প্রথম ঘোষণা করেছিলেন।
চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিমান ছাড়াও প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র, প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য লজিস্টিক সহায়তার ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানা গেছে। এর মাধ্যমে ভারতীয় নৌসেনার প্রশিক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং যুদ্ধ প্রস্তুতি আরও উন্নত হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি ভারতের সামরিক কৌশলগত অবস্থানকে মজবুত করবে, বিশেষ করে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উৎসে বৈচিত্র্য এনেছে। এখন দেশটি ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মতো দেশ থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংগ্রহ করছে।
এই রাফাল চুক্তি শুধু দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকেই মজবুত করবে না, বরং ভবিষ্যতে আরও যৌথ প্রকল্পের সম্ভাবনাও তৈরি করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বর্তমানে বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ রাফাল যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে বা অর্ডার দিয়েছে। ফ্রান্স, রাফালের মূল উৎপাদক দেশ হিসেবে, নিজেদের বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীতে এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে।
ভারত ইতিমধ্যেই ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফাল বিমান সংগ্রহ করেছে এবং নতুন করে আরও ২৬টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। মিশর প্রায় ৫৫টি রাফাল বিমান অধিগ্রহণ করেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে।
কাতারও ৩৬টি রাফাল বিমান অর্ডার করেছে, যেগুলির কিছু ইতিমধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। গ্রিস ২৪টি রাফাল বিমান কেনার মাধ্যমে তাদের বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করছে। ক্রোয়েশিয়া ১২টি ব্যবহৃত রাফাল বিমান ক্রয় করেছে, যা তাদের সামরিক আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া ৪২টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার একটি বড় চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) ২০২১ সালে রেকর্ড ৮০টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার জন্য বৃহত্তম চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
আরও কয়েকটি দেশ বর্তমানে ফ্রান্সের সঙ্গে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে রাফালের আন্তর্জাতিক উপস্থিতি আরও বিস্তৃত করতে পারে।
