শহিদুল হক, ঢাকা: বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ২০২৫ সালটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে এ বছর।
২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক কর্মী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। বিএমইটি (BMET) এর তথ্য অনুযায়ী এ বছর প্রায় ১২ থেকে ১৩ লাখ কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান পেয়েছেন। মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য: দীর্ঘসূত্রতা কাটিয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এ বছর পূর্ণ শক্তিতে চালু হয়েছে। এছাড়া সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েতে প্রথাগত কর্মীর বাইরে পেশাদার ও দক্ষ কর্মীর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপের দুয়ার: ২০২৫ সালে ইতালি, গ্রিস এবং রোমানিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী বৈধভাবে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিশেষ করে কৃষি ও নির্মাণ খাতে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান মজবুত হয়েছে। পূর্ব এশিয়া: জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে ২০২৫ সালে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। ভাষা শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়ায় এই বাজারগুলোতে বাংলাদেশের আয় বেড়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে প্রবাসীদের মধ্যে বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল তার সুফল ২০২৫ সাল জুড়ে অব্যাহত ছিল। রেকর্ড অর্জন: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘর স্পর্শ করেছে। হুন্ডি প্রতিরোধে কড়াকড়ি এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রণোদনার সঠিক ব্যবহারের ফলে প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত হয়েছেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: মোবাইল আর্থিক সেবা (MFS) এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো এ বছর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর ফলে তাৎক্ষণিকভাবে রেমিট্যান্সের টাকা প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
সাফল্যের পাশাপাশি কিছু পুরনো সমস্যা এ বছরও উদ্যোক্তা ও কর্মীদের ভুগিয়েছে অভিবাসন ব্যয়: দালালের দৌরাত্ম্য ও উচ্চ অভিবাসন ব্যয় ২০২৫ সালেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। অনেক কর্মী ভিটেমাটি বিক্রি করে বিদেশ গেলেও কাঙ্ক্ষিত বেতন না পাওয়ায় আর্থিক ঝুঁকিতে পড়েছেন। দক্ষতার অভাব: আধুনিক বিশ্বের শ্রমবাজারের সাথে তাল মেলাতে কারিগরি দক্ষতার যে প্রয়োজন তা আমাদের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে এখনো কম। ফলে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে গিয়ে তারা কম মজুরি পাচ্ছেন। সিন্ডিকেট ও প্রতারণা: বড় বড় শ্রমবাজারে গুটিকয়েক এজেন্সির সিন্ডিকেট এ বছরও আলোচনার কেন্দ্রে ছিল যা সাধারণ কর্মীদের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০২৬ সালকে সামনে রেখে সরকার ও বেসরকারি খাত কিছু বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সেবা খাতের ওপর গুরুত্ব: চিকিৎসক, নার্স, আইটি বিশেষজ্ঞ এবং কেয়ারগিভার পাঠানোর ক্ষেত্রে ২০২৬ সালে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। স্মার্ট মাইগ্রেশন: ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাসপোর্ট ও ভিসা যাচাই এবং সরাসরি নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ চলছে যা খরচ কমিয়ে আনবে। রেমিট্যান্স বন্ড: প্রবাসীদের সঞ্চয় উৎসাহিত করতে রেমিট্যান্স বন্ড এবং বিশেষ বিমা সুবিধার আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
২০২৫ সাল শেষে এটি স্পষ্ট যে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। যদি অভিবাসন ব্যয় কমানো এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আরও জোর দেওয়া যায় তবে ২০২৬ সালে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।










