Home সারাদেশ বাবার কবরের পাশেই চিরঘুমে লামিয়া: এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার করুণ পরিণতি

বাবার কবরের পাশেই চিরঘুমে লামিয়া: এক নিষ্ঠুর বাস্তবতার করুণ পরিণতি

জানাযা। ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া গ্রামের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন লামিয়া। জীবনের নির্মম ট্র্যাজেডির শিকার হয়ে অবশেষে বাবার কবরের পাশেই শেষ আশ্রয় নিল সে। জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে শহিদ জসিম উদ্দিনের মেয়ে লামিয়া।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক ৬ নম্বর রোডের ভাড়া বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে লামিয়া। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার সন্ধ্যায় যখন তার নিথর দেহ পাংগাশিয়া গ্রামে পৌঁছায়, তখন পুরো গ্রাম শোকে মুহ্যমান হয়ে ওঠে। যেন বাতাসও ভারী হয়ে উঠেছিল সেদিন।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পাংগাশিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তার জানাজা। শত শত মানুষ, যারা হয়তো কোনোদিন কাছ থেকে চেনেনি লামিয়াকে, সেই জানাজায় চোখের জলে বিদায় জানায় তাকে।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন- পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তর অঞ্চল) সারজিস আলম, দুমকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইজাজুল হক, দুমকি থানা অফিসার ইনচার্জ মো. জাকির হোসেন, গণঅধিকার পরিষদ উচ্চতর পরিষদ সদস্য কৃষিবিদ মো. শহিদুল ইসলাম ফাহিম, পটুয়াখালী জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক, আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য জাহিদুল ইসলাম রনি, পটুয়াখালী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নাহিয়ান প্রমুখ। এছাড়া সাধারণ মানুষও ভিড় জমিয়েছিল বিদায়ের সাক্ষী হতে।

উল্লেখ্য, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল লামিয়াকে। গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানা বাড়ি ফেরার পথে তাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হতে হয়। ঘটনার দু’দিন পর, ২০ মার্চ সাহস করে থানায় ধর্ষণের মামলা করেন লামিয়া। অভিযুক্ত দুইজন- সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সী আদালতের আদেশে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।

কিন্তু আইনের আশ্রয় নিয়েও নিজের ক্ষত সারাতে পারেনি লামিয়া। সমাজের রুদ্ধশ্বাস চাপা কথার আঘাত হয়তো তাকে আরও একাকী করে তুলেছিল। শেষে নিজেই থামিয়ে দিল জীবনের যন্ত্রণা।

লামিয়া চলে গেলেও রেখে গেল গভীর শোক, ক্ষোভ আর প্রশ্ন— ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা আর মানবিকতার এই সমাজ কি আদৌ তার পাশে ছিল?

আজ, পিতার কবরের পাশের মাটিতে শুয়ে লামিয়া যেন সময়কে প্রশ্ন করছে— এই সমাজ তাকে কী দিয়েছিল?