শচীনের সঙ্গে ফ্রেমবন্দি দুই ‘গোট’
স্পোর্টস ডেস্ক: যুবভারতীর বিশৃঙ্খলা আর ধাক্কাধাক্কিতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছিল, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তা যেন মলম দিয়ে সারিয়ে তুলল মুম্বই। রবিবার ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী সাক্ষী থাকল এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের। যেখানে বিশৃঙ্খলা নয়, ছিল শুধুই সম্মান আর ভালোবাসা। যুবভারতীতে মাত্র ২২ মিনিট থেকেই যিনি অস্বস্তি নিয়ে ফিরেছিলেন, সেই লিওনেল মেসি ওয়াংখেড়েতে হাসিমুখে কাটালেন পুরো ৬১ মিনিট!
কলকাতা যা পারেনি, করে দেখাল মুম্বই
যুবভারতীর তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলিয়ে দিল ওয়াংখেড়ের সুশৃঙ্খল আয়োজন। অভিযোগ ছিল, কলকাতায় মেসি-সুয়ারেজদের সঙ্গে সেলফি তোলার হুড়োহুড়ি আর ভিড়ের চাপে বিরক্ত হয়েছিলেন তারকারা। কিন্তু মুম্বইয়ের ছবিটা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে নিরাপত্তা ও সম্মানের এক অদৃশ্য প্রাচীর ছিল, যা তারকাদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করেছে। কোনো রাজনৈতিক নেতা বা মন্ত্রী সারাক্ষণ মেসির পাশে ঘোরেননি, কেউ জোর করে সেলফি তোলার চেষ্টাও করেননি। এই ‘স্নিগ্ধ দূরত্বই’ মেসি, সুয়ারেজ এবং ডি’পলকে (Rodrigo De Paul) আশ্বস্ত করেছে।
এক ফ্রেমে ক্রিকেটের ঈশ্বর ও ফুটবলের জাদুকর
এদিন ওয়াংখেড়ে দেখল মহাজাগতিক এক মিলন। ভারতের মাটিতে পা রেখে সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে দেখা করলেন লিওনেল মেসি। সচিন নিজের সই করা জার্সি তুলে দিলেন মেসির হাতে, আর মেসি পাল্টা সচিনকে উপহার দিলেন ২০২৬ বিশ্বকাপের বল। শুধু তাই নয়, ভারতের ফুটবল আইকন সুনীল ছেত্রীকেও নিজের সই করা আর্জেন্টিনার জার্সি উপহার দেন এল এম টেন।
‘প্রজেক্ট মহাদেব’ ও শিশুদের সঙ্গে মেসি
এদিন মহারাষ্ট্র সরকারের ‘প্রজেক্ট মহাদেব’-এর শুভ সূচনা হয় মেসির হাত ধরে। রাজ্যের ৩৫টি জেলা থেকে বাছাই করা শিশুদের ফুটবলের স্কলারশিপ দেওয়ার এই উদ্যোগে সামিল হয়ে মেসি, সুয়ারেজ ও ডি’পল বাচ্চাদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন। এমনকি তাদের সঙ্গে ‘পাসিং দ্য বল’ খেলতেও দেখা যায় তিন মহাতারকাকে। ডি’পলকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি যেন নিজের পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গেই খেলছেন!
তারকার মেলা, তবু বিনয়ের জয়
গ্যালারিতে ছিলেন অজয় দেবগণ, করিনা কাপুর খান, হরভজন সিংয়ের মতো তারকারা। কিন্তু কেউ মাঠের ভেতরে গিয়ে ফুটবলারদের বিরক্ত করেননি। এই সৌজন্যবোধই মুগ্ধ করেছে সকলকে। অনুষ্ঠানের শেষে সচিন বলেন, “মুম্বই স্বপ্নের নগরী। এখানে আরও একবার স্বপ্ন সত্যি হলো। মেসি খেলার পাশাপাশি একজন দারুণ মানুষ।”
ওয়াংখেড়ে প্রমাণ করে দিল, তারকাদের সম্মান জানানোর অর্থ গায়ের ওপর পড়ে সেলফি তোলা নয়, বরং সুষ্ঠু আয়োজন ও নিরাপদ পরিবেশ। রবিবারের সন্ধ্যায় মুম্বই যেন যুবভারতীর ব্যর্থতাকে সুদ-সমেত মিটিয়ে দিয়ে বিশ্ব ফুটবলের কাছে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করল।










